‘সত্যিকারে মেধাবী হতে হলে মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক হতে হবে’
কেউ আসছে বন্ধুদের সঙ্গে, কেউ আবার অভিভাবকের সঙ্গে। কারও ঘাড়ে ব্যাগ, কেউবা খালি হাতে। এভাবেই আজ সোমবার সকালে মাগুরা শহরের ঐতিহাসিক নোমানী ময়দানে জড়ো হচ্ছিল কৃতী শিক্ষার্থীরা। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে আটটা ছোঁয়ার আগেই ওই এলাকা তাদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে।
এই ময়দানসংলগ্ন আছাদুজ্জামান মিলনায়তনে আজ উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রথম আলোর আয়োজনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিদ্যালয়ের পাট চুকানোর কয়েক মাস পর কৃতী শিক্ষার্থীরা সহপাঠীদের পেয়ে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করে। কেউ সেলফি তোলে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠে। অভিভাবকদের উৎসাহও ছিল চোখে পড়ার মতো।
এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাগুরার চার উপজেলার জিপিএ-৫ পাওয়া ৩৩০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। সকাল ৯টায় নির্ধারিত বুথ থেকে ক্রেস্ট, স্ন্যাক্স ও উপহার সংগ্রহের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা মিলনায়তনের নিচতলায় এবং অভিভাবকদের মিলনায়তনের ওপরতলায় বসার ব্যবস্থা করা হয়। অভিভাবকেরা অনুষ্ঠান উপভোগের পাশাপাশি বিনা মূল্যে সোমবারের প্রথম আলো পড়েন।
সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে মিলনায়তন কানায় কানায় ভরে যায়। ১০টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান পর্ব। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে গলা মেলান শিক্ষার্থী ও অতিথিরা। জাতীয় সংগীত শেষ হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতার প্রতি সম্মান জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর মাগুরা প্রতিনিধি কাজী আশিক রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রিজভী জামান। কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শুধু পরীক্ষায় ভালো ফল করলেই তাঁকে মেধাবী বলে না। সত্যিকারে মেধাবী হতে হলে শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক, মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হতে হবে। আর এর জন্য চাই বইপড়াসহ বহুমুখী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা। প্রয়োজন সুকুমার বৃত্তির চর্চা করা। প্রকৃত মানুষ হতে হলে মূল্যবোধ ও অধিকারসচেতন হতে হবে। নিজেকে ভালোবাসতে হবে। নিজেকে ভালোবাসার অর্থ হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ, প্রকৃতি ও মানুষকে ভালোবাসা। আর সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে দেশকে ভালোবাসা। যার মধ্যে দেশপ্রেম নেই সে কখনো বড় হতে পারে না।’
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মুখস্থ, মিথ্যা ও মাদক থেকে দূরে থাকার শপথ পাঠ করান প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদী হাসান। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের অনুপ্রাণিত করতে আমরা এখানে এসেছি। তোমাদের হাত ধরে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এ কারণে তোমাদের ভালো মানুষ হতে হবে।’
‘স্বপ্ন দেখো, জীবন গড়ো’ স্লোগানে সারা দেশের ৬৪টি জেলায় চলছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই বিকাশ এবং সহযোগিতায় থাকছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বহুব্রীহি, সানকুইক, কনকা-গ্রি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মাগুরা বন্ধুসভার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. কাজল মিয়া। দিনব্যাপী এই আয়োজনে শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল ক্রেস্ট, ডিজিটাল সার্টিফিকেট, শিখোর পক্ষ থেকে বিশেষ শিক্ষাবৃত্তি, ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাক্স, সানকুইকের ফ্রুট জুস, প্রথম আলো ই-পেপার (তিন মাস) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, প্রথমা ডটকমে অনলাইনে বই অর্ডারে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, প্রথমা প্রকাশনের বিক্রয়কেন্দ্রে প্রথমা প্রকাশন ও প্র-প্রকাশনের প্রকাশিত বইয়ে ৩০ শতাংশ ছাড়, কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তার ছয় মাসের প্রিন্ট সংস্করণের সাবস্ক্রিপশনে বিশেষ ছাড়।
মাগুরা বন্ধুসভার সদস্য ফারহানা সুলতানার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য অতিথিদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যের পাশাপাশি ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বন্ধুসভার সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় সংগঠন সুরসপ্তকের শিল্পীদের পরিবেশনা শিক্ষার্থীদের মাতিয়ে রাখে।
অনুষ্ঠানে আসা কৃতী শিক্ষার্থী অনুপম শীল বলে, ‘সম্মান বা সংবর্ধনা যেকোনো মানুষকে আরও ভালো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। প্রাণবন্ত ও সাজানো-গোছানো এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি গর্বিত। অতিথিদের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য আমার জীবনে চলার পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করব। আর সাংস্কৃতিক পর্বটি ছিল অনেক আনন্দময়। সব মিলিয়ে যে প্রত্যাশা ছিল, এর চেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছি।’