৩২ বছর ধরে পড়ে আছে

গোচারণভূমি বা মাঠের মতো মনে হলেও ওই জমি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) অধিগ্রহণ করা।

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বিসিকের জন্য অধিগ্রহণ করা জমি। সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার সাতাশিয়া গ্রামে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে বিশাল মাঠ। দেখলে মনে হতে পারে খেলার মাঠ। মাঠে ফুটবল খেলার জন্য অস্থায়ী গোলবারও আছে। ভেতরে অবাধে ঘাস খাচ্ছে কয়েকটি মহিষ ও গরু।

গোচারণভূমি বা মাঠের মতো মনে হলেও ওই জমি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) অধিগ্রহণ করা। ৩২ বছর আগে মুক্তাগাছা বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য ওই জমি সরকার অধিগ্রহণ করে। কিন্তু সেখানে শিল্পনগরী গড়ে ওঠেনি।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতাশিয়া গ্রামে প্রস্তাবিত বিসিক শিল্পনগরীতে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। সাতাশিয়া গ্রামের বাসিন্দা ওমর ফারুকের বয়স এখন ৪০। তিনি বলেন, ‘আমি যখন খুব ছোট, তখন থেকেই এ মাঠ দেখে আসছি। আগে মাঠটির সীমানাপ্রাচীর ছিল না। বছরখানেক আগে সীমানাপ্রাচীর করা হয়েছে। তবে বিসিক শিল্পনগরী হিসেবে যাত্রা শুরু হচ্ছে না।’

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, জায়গাটি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকায় বিকেলে এলাকার ছেলেরা ফুটবল খেলে। অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালানো শিখতে আসেন। অনেক সময় তরুণ–তরুণীরা বেড়াতে যান। জায়গাটির ভেতরে এক পাশে স্থানীয় এক বাসিন্দা কলাগাছ লাগিয়েছেন। এ ছাড়া চারপাশে রয়েছে ঝোপঝাড়। সেসব ঝোপের আড়ালে শিয়ালের বসবাস।

ময়মনসিংহ বিসিক শিল্পনগরী সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে এই পাঁচ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় মুক্তাগাছা বিসিক শিল্পনগরী গড়তে। ওই সময় জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হয়েছিল ১৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। মাটি ভরাটে খরচ হয়েছিল ১২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। মোট ২৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় মহাসড়কের পাশে পাঁচ একর জমি মিলেছিল। আনুমানিক এক বছর আগে পাঁচ একর জমিতে সীমানাপ্রাচীর করতে ব্যয় হয়েছে ৫৮ লাখ টাকা।

ময়মনসিংহ বিসিকের শিল্পনগরী কর্মকর্তা কাউসার আহমেদ বলেন, মুক্তাগাছা বিসিকের কাজ চলমান। দ্রুত এটি চালু করার কথা ভাবছেন বিসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অবকাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। এখন শুধু সীমানাপ্রাচীরের দুটি ফটক, ভেতরের সড়ক ও ড্রেন নির্মাণের কাজ বাকি আছে। মুক্তাগাছা বিসিক শিল্পনগরীতে ৩৮টি প্লট করা হবে। পরে প্লট বরাদ্দের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ৩২ বছর আগে যখন মুক্তাগাছায় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন মানুষের স্বপ্ন ছিল, এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। তবে এখন মানুষ বিসিক নিয়ে স্বপ্ন দেখেন না। কারণ, ৩২ বছরে যে বিসিক বাস্তবায়ন করা হয়নি, সেটি ভবিষ্যতে কবে বাস্তবায়িত হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

ময়মনসিংহের নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক আইনজীবী নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জায়গা অধিগ্রহণের পর ৩২ বছরেও কেন মুক্তাগাছায় বিসিক বাস্তবায়ন করা হলো না, সেটি আমার বোধগম্য নয়। সেই সময় খুব অল্প খরচে জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছিল। এখন ওই এলাকার মহাসড়কের পাশে জমির দাম বহুগুণ বেড়েছে। মুক্তাগাছায় বিসিক শিল্পনগরীর যাত্রা শুরু হলে ময়মনসিংহ জেলার শিল্পায়ন সমৃদ্ধ হতো।’

ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহসভাপতি শংকর সাহা বলেন, ‘আমরা ময়মনসিংহ চেম্বারের পক্ষ থেকে দ্রুত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্লট বরাদ্দের দাবি একাধিকবার জানিয়েছি। এ ব্যাপারে শুধু আলোচনা হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন করা হয় না।’

মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম লুৎফুর রহমান বলেন, ‘বিসিকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমি এ ব্যাপারে কথা বলেছি। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে, প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর বিসিকের চেয়ারম্যান উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সেখানে চাষাবাদ করার প্রাথমিক উদ্যোগের কথা বলেছিলেন। সেটি বাস্তবায়ন করা হয়নি। তবে বিসিকের চেয়ারম্যান দ্রুত প্লট বরাদ্দের মাধ্যমে মুক্তাগাছা বিসিক শিল্পনগরী শুরু করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’