ইসলামপুরে শতকোটি টাকার সেতুর ব্লকে ধস

ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ফকিরপাড়া এলাকায় প্রস্তাবিত শ্মশানঘাট, নির্মাণাধীন শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম ও আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে।

জামালপুরের ইসলামপুরের ফকিরপাড়ায় ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলায় সেতুর পিলারের ব্লক ধসে পড়ছে। গত রোববার বিকেলে ফকিরপাড়া এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ফকিরপাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলায় শতকোটি টাকায় নির্মিত সেতুর পিলারের ব্লক ধসে পড়ছে। সেতুর মূল অংশ, সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙনরোধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ নদে পানি বাড়ছে। নদ দিয়ে ব্যাপক স্রোত বয়ে যাচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেতুর পূর্ব পাশের পিলারের সিসি ব্লকের গোড়ায়ও স্রোত বয়ে যাচ্ছে। এতে সেতুর রিটেইনিং ওয়ালের সিসি ব্লক ধসে পড়ছে। সেতুর এলাকায় ফসলি জমি ভেঙে পড়ছে। নদের এমন ভাঙনে ফকিরপাড়া এলাকায় প্রস্তাবিত শ্মশানঘাট, নির্মাণাধীন শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম ও আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) জামালপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ইসলামপুর-বকশীগঞ্জ-শেরপুর বহুমুখী সড়কে ফকিরপাড়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ৫৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটির নাম শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম। ২০১৮ সালে সেতুটি যান চলাচলের জন্য উদ্বোধন করা হয়। এ সেতু উপজেলার সঙ্গে বকশীগঞ্জ ও শেরপুর জেলাকে সরাসরি যুক্ত করেছে।

স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, সেতুটি নির্মাণের পর থেকে ফকিরপাড়া এলাকায় সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হয়। ফলে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সেতু এলাকায় বালু উত্তোলন শুরু করে। মূলত অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় নদে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখন ভাঙন শুরু হয়েছে। নদের পাড় ভাঙতে ভাঙতে এখন সেতুর পিলারের গোড়ার সিসি ব্লক ভেঙে যাচ্ছে। দ্রুত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে সেতুটির বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

ফকিরপাড়ার বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন বলেন, সেতু এলাকা থেকে তো বালু উত্তোলন করা হয়ই, অনেক সময় সেতুর একদম নিচ থেকে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। এতে নদে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। সেতুর পিলারের গোড়ায় থাকায় সিসি ব্লকও ভেঙে মাটি সরে যাচ্ছে। এতে সেতুটির বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

আকবর আলী নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, সেতু পূর্ব পাশের পিলার থেকে দূরে ছিল নদীর পাড়। ক্রমেই সেই পাড় ভেঙে এখন পিলারের গোড়ায় থাকা সিসি ব্লকও ভেঙে পড়ছে। নদীভাঙনের মূল কারণ বালু উত্তোলন। নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করেছেন। কিন্তু কখনো বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। এখন ১০৪ কোটি টাকার সেতু হুমকির মুখে পড়েছে।

ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান রুমান বলেন, সেতু এলাকায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে কি না, তা এ মুহূর্তে জানা নেই। তবে দ্রুত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এলজিইডি জামালপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন, সেতুটির পিলারের প্রটেকশনের সিসি ব্লক থেকে প্রায় ৯০ মিটার দূরে ছিল নদের পাড়। সেটি ভাঙতে ভাঙতে সিসি ব্লক ধসে পড়ছে। সরেজমিন ভাঙন দেখা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে পিলারের গোড়ার ভাঙনরোধে কাজ শুরু হবে। তবে পূর্ব পাশেও বিশাল এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানেও জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে।