ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না: নুরুল হক
ডাকসু নির্বাচনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের প্রবেশ ও স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি প্রতিবাদী চেতনা গড়ে ওঠে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি হয়। ডাকসু, জাকসু, রাকসু, চাকসুর ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো যদি ধারাবাহিকভাবে হতো, তাহলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের গ্রুপ তৈরি হতো। এখন সবার দাবি, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না।
আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্ররাজনীতির সংস্কার: প্রসঙ্গ ডাকসু, জাকসু, চাকসু, রাকসু...’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এ কথা বলেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক। বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনারকক্ষে এ সংলাপের আয়োজন করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
নুরুল হক বলেন, ‘অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগ, রক্তদান ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন এসেছে। আমরা চাই না আর আমাদের রক্ত দিতে, জীবন দিতে ও আন্দোলন করতে হোক। এই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে জাতিকে নতুন করে পথ দেখিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেই শিক্ষার্থীদের দিয়ে ছাত্ররাজনীতির একটি পরিবর্তন হোক। সেই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ছাত্র সংসদগুলো অন্যতম বড় পথ ও নিয়ামক হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারীদের নির্বাচন হয়, শিক্ষকদের নির্বাচন হয় প্রতিবছর, তাহলে ছাত্রদের নির্বাচন কেন হবে না? ছাত্র সংসদ নির্বাচন কেন হবে না?’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে উঠে আসা নেতৃত্বকে পরিচর্যা করে তাদের জাতীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেটি জাতীয় দলগুলো ভেঙেছে। ভবিষ্যতে একত্রে থাকার জন্য সব ছাত্রসংগঠনকে একসঙ্গে বসতে হবে, একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রত্যেকের সদিচ্ছার মধ্য দিয়ে সংস্কার করতে হবে। আমরা আশা করব, ছাত্রসংগঠনগুলো দ্রুতই একটি ঐকমত্যে আসবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির প্রক্রিয়া আমরা চূড়ান্ত করব। তার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আমরা করতে পারব। যেটা জাতীয় নির্বাচনের আগেই হতে হবে।’
কোনো রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন চাইলেও নিজেরা নিজেরা ছাত্ররাজনীতি সংস্কার করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি খায়রুল আহসান। তিনি বলেন, ‘একটি ছাত্রসংগঠন লেজুড়বৃত্তি করব না বললেই কি তারা লেজুড়বৃত্তিমুক্ত হয়ে যায়? ছাত্ররাজনীতি সংস্কার হতে পারে ছাত্র সংসদ পদ্ধতির মাধ্যমে। কিছু কিছু ছাত্রসংগঠন নিজেরা নিজেরা সংস্কার আনতে পারে। যেমন নেতৃত্বে যারা থাকবে, তাদের অবশ্যই ছাত্রত্ব থাকা বাধ্যতামূলক করা। গত ১৫ বছর শিক্ষার্থীরা শুধু ছাত্রলীগকেই দেখেছেন। অন্য কাউকে দেখার সুযোগ পাননি। আমরা তাদের সব সময় একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হতে দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া জরুরি। ছাত্র সংসদগুলোয় আমরা কোটায় কোনো সভাপতি চাই না। সভাপতি চাই ছাত্রদের মধ্য থেকেই।’
ছাত্ররাজনীতি ছিল, আছে এবং থাকবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বেও ছাত্ররাজনীতি ছিল। ছাত্রনেতারা মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেছেন বলে জানান বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্যা। তিনি বলেন, ছাত্রনেতারা মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেছেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশের সংকটের সময় দেশের মানুষ যখন প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর থেকে ভরসা হারিয়ে ফেলেছিলেন, তখন ছাত্রদের ডাকে সাধারণ মানুষ আন্দোলনে অংশ নিয়ে সরকারের পতন ঘটিয়েছেন। নব্বইয়ের আন্দোলন থেকে শুরু করে চব্বিশের আন্দোলন ছিল ছাত্রদের আন্দোলন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ছিল। ১৯৯৩ সালে শিক্ষকদের সঙ্গে জাকসুর নেতাদের সংঘর্ষের পর জাকসু বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে জাকসু বন্ধ রয়েছে। যদি মানবিক মূল্যবোধ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের জায়গা না বুঝি, তাহলে জাকসু করে লাভ কী? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুযায়ী, জাকসু থাকতে হবে। তাহলে জাকসুর সভাপতি হিসেবে আমি কেন জাকসু দেব না?’
ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি শাখার সদস্যসচিব ইকবাল হোসেনের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি শাখার সংগঠক ইয়াহিয়া জিসান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) সাবেক সভাপতি প্লাবন তারিক।