বেশি দামে সার বিক্রি, বিপাকে কৃষক 

কৃষক মঞ্জুর রহমান কালিগঞ্জ বাজারের এক খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনে চাষাবাদ শুরু করেছেন।

রবি মৌসুমের শুরুতে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার চাষিরা সারসংকটে পড়েছেন। সরকার নির্ধারিত দামে সার কিনতে পারছেন না। তাঁদের অভিযোগ, পরিবেশকেরা (ডিলার) কৃষকদের কাছে সার বিক্রি না করে অতিরিক্ত দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। পরে সেই সার খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে তাঁদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এরপরও চাহিদা মতো পাচ্ছেন না। তবে কৃষি বিভাগের দাবি, চাষিরা সার মজুত করার কারণে সংকটের তৈরি হয়েছে। সারসংকটের কারণে ২৫ হাজার ৪৫৪ হেক্টর জমির চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়েছে।

উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের পিদ্দপাড়া গ্রামের কৃষক মঞ্জুর রহমান বলেন, ইউনিয়নের পরিবেশকের কাছে এক সপ্তাহ ধরে ধরনা দিয়ে সার পাননি। বাধ্য হয়ে কালীগঞ্জ বাজারের এক খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনে চাষাবাদ শুরু করেছেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর বাগমারায় মোট ২৫ হাজার ৪৫৪ হেক্টর জমিতে রবিশস্য চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৫৩৪ হেক্টর জমিতে শর্ষে, ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু, ৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ১ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ ও ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ শুরু হয়েছে। এসব শস্যের জন্য ইউরিয়া, ডিএপি, এমওপি সার প্রয়োজন হয়। সরকার নির্ধারিত উপজেলার ১৮ জন বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) পরিবেশকের মাধ্যমে এসব সার সরবরাহ করা হয়।

 উপজেলার ভটখালী গ্রামের কৃষক এসাহাক আলী, জাহিদুল ইসলাম ও শান্তপাড়া গ্রামের নুর মোহাম্মদ জানান, তাঁদের ইউনিয়নের (যোগীপাড়া) সরকার নির্ধারিত পরিবেশক ঠিকমতো গুদামঘর খোলেন না। তিনি খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বেশি দামে গোপনে সার বিক্রি করে চলে যান। কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করেন না।

একই এলাকার কৃষক মহির উদ্দিন বলেন, নিজ এলাকা থেকে ১৫-১৬ কিলোমিটার দূরের একজন ব্যবসায়ীকে পরিবেশক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁর দোকান সব সময় বন্ধ থাকে। তাঁরা এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পরেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সারের পরিবেশক সুফিয়া এন্টারপ্রাইজের পরিচালক আবদুস সোবহান বলেন, শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সারের দোকান খোলা থাকে। সারের কোনো সংকট নেই। যাঁরা অভিযোগ করছেন, তাঁরা সঠিক বলেননি। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সার বিক্রির অভিযোগও ঠিক নয়। তবে এই প্রতিবেদক গত বৃহস্পতিবার গুদামঘর বন্ধ পাওয়ায় বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

চাষিদের অভিযোগ, তাঁরা পরিবেশকদের কাছে সারের জন্য ঘুরে ফিরে আসছেন। তাঁদের কাছে কোনো সার বিক্রি করছেন না ডিলারেরা। এ ছাড়া খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দামে সার কিনছেন। পরিবেশকেরা বেশি দামে সার বিক্রির জন্য মজুত করছেন এবং গোপনে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, যে পরিবেশকের গুদামঘর বন্ধ রেখেছেন, তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সার পৌঁছাতে সময় লাগছে। তবে চাষিরা মজুত করে রাখার কারণে সারের চাহিদা বেড়েছে। পরিবেশকদের বেশি দামে সার বিক্রি প্রসঙ্গে আবদুর রাজ্জাক বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছেও সার বিক্রি করতে হয়। তবে সব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলার মোহাম্মদপুর এলাকার ভ্যানচালক আবদুল মালেক বলেন, তিনি এবার কিছু জমি বর্গা নিয়ে আলু চাষ করবেন। কিন্তু সার সংগ্রহ করতে পারছেন না।

শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন বলেন, তাঁর এলাকার চাষিরা সার পাচ্ছেন না। তাঁর ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ সার কোথায় যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। সারের পরিবেশকেরা মজুত বা গোপনে বিক্রি করে দিচ্ছেন এমন অভিযোগ রয়েছে। এসব খতিয়ে দেখার দাবি জানান তিনি।