ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিদের আতঙ্কিত হয়ে পড়ার পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যাচ্ছে না

বিকট শব্দের পর মোনাজাত ফেলে ছুটছেন মুসল্লিরা। রোববার সকালে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায়ছবি: দীপু মালাকার

ইজতেমার আখেরি মোনাজাত চলাকালে হঠাৎ হাজারো মুসল্লির আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটির ঘটনার পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কেউ কেউ বলছেন, মোনাজাতের সময় ইজতেমা মাঠের ৪ নম্বর ফটকে একটি ড্রোন ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আবার কারও দাবি, টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় ছবি ধারণের সময় ড্রোনের আঘাতে সড়কে থাকা কয়েকটি গ্যাস বেলুন ফেটে বিকট শব্দ হয়, এতে আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন মুসল্লিরা।

আজ রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় তাবলিগের শুরায়ে নেজাম বা মাওলানা জোবায়ের অনুসারীদের প্রথম ধাপের ইজতেমা। মোনাজাত চলাকালে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হাজার হাজার মুসল্লি ছোটাছুটি শুরু করেন। এতে আহত হন অন্তত ৪১ জন মুসল্লি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘টেলিফোনে’ কোনো বক্তব্য দেন না জানিয়ে ফোন কেটে দেন। পরে মহানগর পুলিশের টঙ্গী জোনের উপকমিশনার (ডিসি সাউথ) এন এম নাসিরুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার পেছনে ভিন্ন ভিন্ন কথা শোনা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মাঠের ৪ নম্বর গেট এলাকায় দুটি ড্রোনের সংঘর্ষে বা ড্রোনের শব্দে মুসল্লিরা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। আবার কেউ বলছেন, স্টেশন রোডে ড্রোনের আঘাতে বেলুন ফাটার শব্দে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আমরা কোনোটাই পুরোপুরি কনফার্ম হতে পারছি না। বিষয়টি নিশ্চিত হতে আমাদের চেষ্টা চলছে।’

৪ নম্বর ফটক এলাকার মুসল্লিদের ছোটাছুটির ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোনাজাত শুরু হয় সকাল ৯টা ১১ মিনিটে। ৪ নম্বর ফটকের সামনে মুসল্লিরা যে যাঁর মতো মোনাজাতে মগ্ন। এর মধ্যে ৯টা ৩০ মিনিটে হঠাৎ মুসল্লিরা ছোটাছুটি শুরু করেন। দৌড়ে মাঠ ত্যাগ করার চেষ্টা করেন। এ সময় পড়ে গিয়ে আহত হন অনেকে। একইভাবে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকার ভিডিওতে দেখা যায়, সেখানেও মুসল্লিরা মোনাজাতে মগ্ন ছিলেন। ঠিক ৯টা ৩৩ মিনিটে হঠাৎ মুসল্লিরা হুড়োহুড়ি শুরু করেন। এ দুই ঘটনার সময়ের ব্যবধান তিন মিনিট। ঘটনাস্থল দুটির দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার।

৪ নম্বর ফটকের সামনে দায়িত্ব পালন করছিলেন দৈনিক সমকাল পত্রিকার টঙ্গী প্রতিনিধি আবুল সালেহ মুসা। মুসল্লিদের হুড়োহুড়িতে তিনি ঘাড়ে আঘাত পান। আবুল সালেহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মোনাজাতের ছবি তুলছিলাম। এর মধ্যেই হঠাৎ বাতাসের (ড্রোনের পাখার মতো) শব্দ অনুভব করি। এরপর কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই দেখি, হাজার হাজার মুসল্লি দৌড়াচ্ছেন। তখন কিছু বুঝে ওঠার আগে আমিও দৌড়ে পালাই।’

একইভাবে স্টেশন রোড এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টঙ্গী প্রতিনিধি তাওহীদ কবির। হুড়োহুড়িতে পড়ে গিয়ে তাঁর পা ফেটে যায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মোনাজাতের ছবি নিচ্ছিলাম। এরই মধ্যে হঠাৎ একটি বিকট শব্দ হয়। মুসল্লিরা ছোটাছুটি শুরু করেন। পরে জানতে পারি, ড্রোনের আঘাতে সড়কে থাকা কয়েকটি গ্যাস বেলুন ফেটে এ শব্দ হয়েছে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে সকাল থেকে টঙ্গীর তুরাগতীরে মানুষের ঢল নেমেছে। সড়ক, মহাসড়ক, খোলা জায়গা, ঘরবাড়ির ছাদ, সড়কে থমকে থাকা বাস, ট্রাক বা পিকআপ ভ্যান—সব জায়গায়ই মানুষ। ইজতেমা মাঠও ভরে যায়। কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে অংশ নেন মোনাজাতে। এর মধ্যেই হঠাৎ মুসল্লিরা আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন। একে একে ৪১ জন চিকিৎসা নেন টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুরায়ে নেজাম বা মাওলানা জোবায়ের অনুসারীদের শীর্ষ পর্যায়ের মুরব্বি মাহফুজুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি, মোনাজাতের ছবি তোলার সময় একটি ড্রোন একটি টিনের ছাদে পড়লে সেটার শব্দে মুসল্লিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, ভয়ে ছোটাছুটি করেন। এর বাইরে আমাদের ইজতেমা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’

আরও পড়ুন