যশোরের ২২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো মাঠ নেই

মাঠ না থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারে না। খেলাধুলার সুযোগ না থাকায় তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।

যশোর শহরের লালদীঘি পুকুরপাড়ের মসজিদ মহল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়কের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে খেলার মাঠ নেই
ছবি: প্রথম আলো

বিদ্যালয়টির তিন পাশে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। আরেক পাশে বাজার। পাঁচ শতক জমির ওপরে তিনতলা ভবনে পাঠদানসহ দাপ্তরিক কাজ চলে। সামনে ও পেছনে আর কোনো জায়গা বা মাঠ নেই। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোনো খেলাধুলা করতে পারে না। খেলাধুলার সুযোগ না থাকায় তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। এই বিদ্যালয়টির নাম মোহনগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি যশোর শহরের বড় মাছ বাজারের কাছে অবস্থিত। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু মোহনগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, জেলার ২২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো মাঠ নেই। মাঠ না থাকায় এসব বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এই বয়সে খেলাধুলা করতে না পারলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে না উল্লেখ করে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি দৌড়ঝাঁপ ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। যখন সেটা থাকে না, তখন শিশুর সামাজিকীকরণে বাধার সৃষ্টি হয়। বাইরে খেলাধুলার মুক্ত পরিবেশ না পেলে শিশু মুঠোফোন গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ে। 

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজারের ভেতর মোহনগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। খেলাধুলার জন্য বিদ্যালয়ে উন্মুক্ত কোনো জায়গা নেই। বিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে রাস্তায় মুরগি ব্যবসায়ীদের দোকান। মুরগির দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলেয়া পারভীন বলেন, ‘১৮৭৫ সালে ৫ শতক জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ১৩৬ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। মাঠে দৌড়াদৌড়ি-খেলাধুলা না করতে পারলে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। বিদ্যালয়ে মাঠ না থাকাতে শিক্ষার্থীদের সমস্যা তো হচ্ছেই। তবে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সময় খেলাধুলার জন্য আমরা কাছের কোনো বিদ্যালয়ে মাঠে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাই।’

আমরা ইনডোর গেমসের মাধ্যমে সেই পরিবেশ দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে স্কুলে মাঠ থাকলে সেটা আরও বেশি সহজ হতো।
রমা রানী চক্রবর্তী, প্রধান শিক্ষক, মসজিদ মহল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যশোর

শহরের লালদীঘি পুকুর পশ্চিম পাড়ের মসজিদ মহল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও পাঁচ শতক জমির ওপরে ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। এই বিদ্যালয়েও খেলাধুলার কোনো মাঠ নেই। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমা রানী চক্রবর্তী বলেন, ‘মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না। আমরা ইনডোর গেমসের মাধ্যমে সেই পরিবেশ দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে স্কুলে মাঠ থাকলে সেটা আরও বেশি সহজ হতো।’

যশোর শহরের বেজপাড়া আজিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনের বারান্দার সিঁড়িতে বসে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। খেলার মাঠ না থাকায় বিদ্যালয়ে টিফিনের বিরতির সময়টুকু এভাবেই কাটে শিশুদের।

পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, ‘আমরা খেলাধুলার জন্য মাঠ চাই।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ১ হাজার ২৯০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে স্বল্প পরিসরে মাঠ রয়েছে ২৪৮টি বিদ্যালয়ে আর একদমই খেলার মাঠ নেই এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২২৬। খেলার মাঠ নেই এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলায়। সেখানে ৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠ নেই। এ ছাড়া সদর উপজেলায় ৪৫, চৌগাছায় ৮, অভয়নগরে ১৪, মনিরামপুরে ৪৪, বাঘারপাড়ায় ৩৩, ঝিকরগাছায় ৯ ও কেশবপুর উপজেলার এমন ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, ‘যেসব স্কুলে খেলার মাঠ নেই, সেসব স্কুলের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে একটা চিঠি আসে। ওই চিঠিতে বলা আছে, যেসব বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই, সেসব বিদ্যালয়ের পাশে খাসজমি থাকলে মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। কিন্তু যশোরে যেসব বিদ্যালয়ে মাঠ নেই, সেসব বিদ্যালয়ের পাশে এমন কোনো খাসজমি পাওয়া যায়নি। সেটাই মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।