ট্রমা না কাটতেই আবারও বিস্ফোরণের খবরে ছুটলেন সুলতান মাহমুদ

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ।
ছবি: প্রথম আলো

বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর আগুন নেভাতে গিয়ে তাঁর চোখের সামনে প্রাণ হারান ১৩ সহকর্মীসহ ৫০ জন। তিনি নিজেও বিস্ফোরণে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন সাত মাস। দেড় মাস আগে কাজে যোগ দিলেও ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার ট্রমা এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ। এর মধ্যেই গত শনিবার সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের খবর আসে তাঁর কাছে। বিএম ডিপোর বিস্ফোরণের কথা মনে এলেও মুহূর্ত কালক্ষেপণ না করে উদ্ধার অভিযান চালাতে ছুটে যান দুর্ঘটনাস্থলে।

সুলতান মাহমুদ দায়িত্ব পালন করছেন সীতাকুণ্ডের কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা হিসেবে। গত বছরের ৪ জুন বিএম কনটেইনার ডিপোর বিস্ফোরণে উত্তপ্ত লোহার টুকরার আঘাতে তাঁর ডান হাতের হাড় ভেঙে যায়। বুকে ও পায়ে জখম হয় তাঁর। দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস চিকিৎসা শেষে ১৯ জানুয়ারি তিনি কর্মস্থলে যোগ দেন। গত শনিবার সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণের পর উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। কারখানাটিতে দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছেন।

আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুমিরা ফায়ার স্টেশনে গিয়ে কথা হয় সুলতান মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, শনিবার বিকেল চারটার দিকে তিনি স্টেশনের ভেতরে ফায়ার সদস্যদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে তাঁর মুঠোফোনে সীমা কারখানায় বিস্ফোরণের খবর আসে। তিনি মুহূর্তের মধ্যে ফায়ার অ্যালার্ম বাজিয়ে সদস্যের নিয়ে গাড়িতে ওঠেন। এরপর একের পর এক কল আসছিল তাঁর মুঠোফোনে। গাড়িতে যেতে যেতেই তিনি বুঝতে পারেন ঘটনাটি ভয়াবহ। ১৫ মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান তিনি।

সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি বীভৎস পরিবেশ। বিস্ফোরণস্থলে রক্ত ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। কারও হাত, কারও পা নেই। আহত মানুষের আহাজারি চলছে। বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে আশপাশের ভবনগুলোর ছাদও উড়ে গেছে। আগুন ধরেছে কারখানার ভেতরে থাকা ট্রাক, ভবনের ভেতরে থাকা আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থে।’

সুলতান মাহমুদ আরও বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে বিএম কনটেইনার ডিপোর বিস্ফোরণের কথা বারবার মনে হচ্ছিল তাঁর। বিএম ডিপোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দুটি দলে ভাগ হয়ে আগুন নেভানো ও উদ্ধার কাজ শুরু করেন। দুটি দলের একটি উত্তপ্ত সিলিন্ডারগুলোকে ঠান্ডা করেছেন, অন্য দলটি আগুন নেভাতে ব্যস্ত ছিলেন। আধঘণ্টার মধ্যেই সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে। অক্সিজেন কারখানাটির একটি তিনতলা ভবনে আগুন বেশি জ্বলতে দেখা যায়।

সেখানে কোনো রাসায়নিক ছিল। ভবনটিতে দুটি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত অবস্থায় পাওয়া যায়। সেখানে কাজ করতে গিয়ে চোখে জ্বালাপোড়া শুরু হয় ফায়ার সদস্যদের। নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল তাঁদের।
বিএম ডিপোর ঘটনার কথা মনে পড়ায় ভয় পেয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘ওই ঘটনায় আমার বেঁচে আসাটাই ছিল অস্বাভাবিক। সৃষ্টিকর্তা মানুষের জন্য কাজ করতেই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তাই একমুহূর্তের জন্যও ভয় পাইনি। হতাহত মানুষকে কীভাবে উদ্ধার করব, সে চিন্তাই মাথার ভেতরে কাজ করেছে।’

বিএম ডিপোর দুর্ঘটনায় ভেঙে যাওয়া হাতটি জোড়া লাগানো হলেও এখনো পুরোপুরি জোর পান না সুলতান মাহমুদ। তিনি সম্প্রতি চিকিৎসকের কাছে এ বিষয়ে শরণাপন্ন হন। চিকিৎসক হাতটিতে আবারও অস্ত্রোপচার করতে বলছে। তবে অস্ত্রোপচার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান সুলতান মাহমুদ।