ফুটপাতের ইফতারিতে আগ্রহ ক্রেতাদের, আছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

রেস্তোরাঁর বাইরে বাহারি ইফতারি বিক্রি করা হচ্ছে। শনিবার বিকেলে পাবনার খেয়াঘাট মোড় এলাকায়
ছবি: হাসান মাহমুদ

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ফুটপাতে মুখরোচক বাহারি ইফতারি বিক্রি করা হচ্ছে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে অপ্রচলিত খাবারের আয়োজনও আছে ইফতারির তালিকায়। বছরের অন্য সময় যেসব খাবার খুব কম খাওয়া হয়, সেসব খাবারের চাহিদা বেড়ে গেছে। চাহিদা বিবেচনায় রমজান মাসজুড়ে রাস্তার পাশে ফুটপাতে ইফতারির অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন বিক্রেতারা। এসব দোকানে ইফতারি কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন ক্রেতারা।

রমজান মাসে এ চিত্র যেন সারা দেশের। পাবনাতেও এর ব্যতিক্রম নয়। মৌসুমি ইফতারি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি জেলা শহরের অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোর বাইরে ফুটপাতে ইফতারির পসরা সাজানো হয়েছে। রাস্তার ধুলাবালু উপেক্ষা করেই বিক্রি করা হচ্ছে তেলে ভাজা বিভিন্ন মুখরোচক খাবার ও হালিম। তবে এসব খাবার কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ক্রেতাদের। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি উপেক্ষা করেই ক্রেতার এসব কিনছেন।

ফুটপাতে ইফতারি বিক্রি করা হচ্ছে। শনিবার বিকেলে পাবনার খেয়াঘাট মোড় এলাকায়
ছবি: হাসান মাহমুদ

পাবনা বেসরকারি শিমলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সরওয়ার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ফুটপাতের খাবারে অনেক সময় ক্ষতিকর মসলা ও রং ব্যবহার করা হয়। ফলে এসব খাবার দেখতে আকর্ষণীয় ও মুখরোচক হয়। দিনভর রোজা পালন শেষে কোনো অবস্থাতেই তেলে ভাজা এসব খাবার স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অন্যদিকে খোলা জায়গায় প্রদর্শন করা এসব খাবারে ধুলা থেকে জীবাণু ছাড়াতে পারে। যা থেকে পেটের পিড়া ও বদহজম হতে পারে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদি কিডনি, লিভারের ক্ষতিসহ বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থাকে।

আজ শনিবার বিকেলে সরেজমিন জেলা শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের আবদুল হামিদ সড়কটির দুই পাশের ফুটপাত এখন অনেকটাই ইফতারি ভ্রাম্যমাণ দোকানের দখলে। কেউ ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন, কেউবা ফলের দোকান। একই চিত্র শহরের খেয়াঘাট সড়ক, বড় বাজার সড়ক ও মহিলা কলেজ সড়কে। মৌসুমি ইফতারি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোও ফুটপাতে ইফতারির পসরা সাজিয়েছে। খোলা পরিবেশেই বিক্রি করা হচ্ছে জিলাপি, হালিমসহ তেলে ভাজা বিভিন্ন ইফতারসামগ্রী। বড় বাজার এলাকায় খোলা আকাশের নিচে বিক্রি হচ্ছে ইফতারির প্রিয় ফল খেজুর। কেউ কেউ গ্রাহকের মন জয় করতে পলিথিনে ঢেকে রেখেছেন এসব ইফতারসামগ্রী। আবার কেউবা খোলা পরিবেশেই বিক্রি করছেন। শত শত মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে ইফতারি কিনছেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, রমজান শুরুর পর থেকে ইফতারির মান নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করা হয়েছে। আজ দ্বিতীয় রমজানে দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে ওজনে কম দেওয়া ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির দায়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে খোলাবাজারে ইফতারি বিক্রির বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা হবে। মান নিয়ন্ত্রণ না রাখতে পারলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফুটপাতে কয়েকজন ইফতারি বিক্রেতা জানান, রমজান মাসে অনেকে রেস্তোরাঁয় বসে খেতে চান না। তাই রেস্তোরাঁর প্রবেশও করেন না। ইফতারি বা খাদ্যসামগ্রী কিনে বেশির ভাগ মানুষ বাড়িতে চলে যান। এ কারণেই রেস্তোরাঁর বাইরে ইফতারির পসরা সাজানো হয়েছে। ধুলাবালু থেকে খাবার রক্ষা করতে পলিথিনে ঢেকে রাখা হয়েছে।

আবদুল হামিদ সড়ক থেকে ইফতারি কিনে ফিরছিলেন পৈলানপুর মহল্লার হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘খোলা পরিবেশের ইফতারি কিছুটা অস্বাস্থ্যকর সেটি বুঝি। তবে খাবারগুলো মুখরোচক। তাই শখ করে কেনা হয় মাঝেমধ্যে।’

এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পাবনা জেলা শাখার সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমান বলেন, খোলা পরিবেশে রাস্তায় খাদ্যসামগ্রী বিক্রি কোনো অবস্থাতেই স্বাস্থ্যসম্মত হতে পারে না। অন্যদিকে অভিজাত রেস্তোরাঁগুলো ফুটপাতে ইফতারি বিক্রির বিষয়টিও ঠিক মনে হচ্ছে না। নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানটি যদি রাস্তায় নেমে আসে, তাহলে তো ভরসার কোনো জায়গা থাকে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত।