৩৬ বছর ধরে আবছারের সংগ্রহে দেড় ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ক্ষুদ্র কোরআন শরিফ

দেড় ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের এবং এক ইঞ্চি প্রস্থের ক্ষুদ্র কোরআন শরিফ গত ৩৬ বছর ধরে সংগ্রহে রেখেছেন চট্টগ্রামের পূর্ব মাদারবাড়ির বাসিন্দা আবছার উদ্দিন
ছবি: জুয়ল শীল

নকশাখচিত ক্ষুদ্র একটি রুপার কৌটা। তার ভেতরে সংরক্ষিত আছে ক্ষুদ্র একটি কোরআন শরিফ, যা দৈর্ঘ্যে মাত্র দেড় ইঞ্চি এবং প্রস্থে মাত্র এক ইঞ্চি। প্রায় ৩৬ বছর ধরে এটি সযত্নে সংরক্ষণ করেছেন চট্টগ্রাম নগরের মাঝিরঘাট এলাকার বাসিন্দা আবছার উদ্দিন। তাঁর দাবি, এটি পৃথিবীর অন্যতম ক্ষুদ্র কোরআন শরিফ।

তবে এই ক্ষুদ্র কোরআন শরিফ সংগ্রহের ঘটনাও কিছুটা আকস্মিক। প্রায় ৩৬ বছর আগে এক অচেনা ব্যক্তি আবছার উদ্দিনের হাতে এই কোরআন শরিফটি তুলে দেন। সে থেকে পবিত্র কোরআন শরিফটি তাঁর ঘরে সংরক্ষিত আছে।

ক্ষুদ্র হলেও এতে ৩০ পারা কোরআনই রয়েছে
ছবি: জুয়েল শীল

গত শুক্রবার দুপুরে তাঁর ভগ্নিপতির বাসায় কথা হয় আবছার উদ্দিনের সঙ্গে। পেশায় পরিবহন ব্যবসায়ী আবছার উদ্দিন বর্তমানে যৌথ পরিবার নিয়ে থাকেন নগরের মাঝিরঘাট এলাকায়। তিনি জানান, ১৯৮৮ সালে বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসায় পড়ার সময় এক ব্যক্তি তাঁকে এই পবিত্র কোরআন শরিফটি উপহার দেন। ছাপার মান, বাঁধাই, প্রচ্ছদ—সবকিছুই খুব সুন্দর।

আবছার উদ্দিন বলেন, ‘তখন আমি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। একদিন মাদ্রাসায় ক্লাস শেষে পাশে রেললাইন ধরে হাঁটছিলাম। তখন ওসমান গণি নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে আমার পরিচয়। কয়েক দফা দেখার পর একদিন আমার হাতে পবিত্র কোরআন শরিফটি তুলে দেন তিনি। তাঁর বিস্তারিত পরিচয় জানতে পারিনি।

নকশা করা রুপার কৌটায় সংরক্ষিত আছে কোরআন শরিফটি
ছবি: জুয়েল শীল

দেখতে চাইলে সংগ্রহে থাকা ক্ষুদ্র কোরআন শরিফটি বের করেন আবছার উদ্দিন। দেখা গেল, রুপার তৈরি ক্ষুদ্র একটি বাক্স। সেটিতে বিশেষ একধরনের তালা। সেটি খুলতেই বেরিয়ে এল তিন পাশে সোনালি প্রলেপ দেওয়া পবিত্র কোরআন শরিফ। নকশাখচিত চামড়ার মলাট রয়েছে এই কোরআন শরিফের। এ ছাড়া নষ্ট না হওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে বিশেষ বাঁধাই।

এবার ঘরে থাকা সাধারণ স্কেল দিয়ে সেটি মেপে দেখালেন তিনি। ক্ষুদ্র এই কোরআন শরিফের দৈর্ঘ্য দেড় ইঞ্চি, প্রস্থ এক ইঞ্চি এবং উচ্চতা প্রায় আধা ইঞ্চির সমান। পৃষ্ঠা সংখ্যা আনুমানিক ৬০০। বিশেষ কাগজে ছাপা এই কোরআনের ছাপার মানও অসাধারণ। ক্ষুদ্রাকৃতির হরফগুলো পড়ার জন্য রুপার কৌটাটিতে বিশেষ আতশি কাচও লাগানো রয়েছে।

আবছার উদ্দিন বলেন, পুরো ৩০ পারা কোরআনই রয়েছে এটিতে। হরফগুলো খালি চোখে পড়া মুশকিল। তবে রুপার কৌটায় থাকা আতশি কাচের নিচে রাখলে পড়া যায় হরফগুলো। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা পুরোনো হয়েছে তাই আতশি কাচটি ঝাপসা হয়েছে কিছুটা।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী, পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম কোরআন শরিফের দৈর্ঘ্য শূন্য দশমিক ৬৬ ইঞ্চি, প্রস্থ শূন্য দশমিক ৫০ ইঞ্চি এবং উচ্চতা শূন্য দশমিক ২৮ ইঞ্চি। ১৯৮২ সালে মিসরের কায়রো শহর থেকে ৫৭১ পৃষ্ঠার এই কোরআন শরিফটি ছাপা হয়। এটির মালিক পাকিস্তানের মুহাম্মদ সাঈদ করিম বেবানি।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে থাকা কোরআন শরিফের তুলনায় আবছার উদ্দিনের সংগ্রহে থাকা কোরআন শরিফটি বড়। তবে এটিও পৃথিবীর অন্যতম ক্ষুদ্র কোরআন শরিফগুলোর মধ্যে একটি। আবছার উদ্দিন বলেন, ‘এটি আমার জন্য বিশেষ রহমত। তাই আমি আমার নিজের চেয়েও এই পবিত্র কোরআন শরিফটি বেশি যত্ন করছি। ৩৬ বছর পার হয়েছে, সামনের দিনগুলোতেও একইভাবে পবিত্রতার সঙ্গে সংরক্ষণ করে যাব।’