পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত সিলেট, উপচে পড়া ভিড়ের আশা

ঈদের ছুটিতে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জলাববন রাতারগুলে মানুষের ভিড় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের এবার লম্বা ছুটি। পাশাপাশি বাংলা নববর্ষের বন্ধও রয়েছে। লম্বা ছুটিতে অনেকেই সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা করে ফেলেছেন। জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলোও পর্যটকদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত। পর্যটকেরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয় নিশ্চিতে তৎপর প্রশাসন।

প্রতিবছরই ঈদের সময়ে সিলেটের জল, পাথর, ঝরনা, চা-বাগান আর প্রাকৃতিক বন দেখতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভিড় জমান পর্যটকেরা। এবার লম্বা ছুটি হওয়ায় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকবে বলে আশাবাদী পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় পর্যটকদের নিরাপত্তায় স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবীরা তৎপর থাকবেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ সিলেট অঞ্চলের সুপার মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, আশা করা হচ্ছে, এবার প্রচুর পরিমাণ পর্যটক সিলেটে বেড়াতে আসবেন। প্রতিদিন পর্যটকদের সংখ্যা কয়েক লাখ থাকতে পারে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় পোশাকধারী ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য ছাড়াও সাদাপোশাকে তৎপরতা থাকবে। পাশাপাশি জেলা পুলিশ সদস্যরাও পর্যটনকেন্দ্রে নিরাপত্তার বিষয়ে সহযোগিতা করবেন। কোনো পর্যটক যাতে স্থানীয় ব্যবসায়ী কিংবা বাসিন্দাদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয় নিশ্চিত করা হবে। কেউ হয়রানির শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে সিলেটে পর্যটকদের বরণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, পর্যটকেরা যাতে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারেন এবং তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ট্যুরিস্ট পুলিশকে তৎপরতা বৃদ্ধি করতে এবং প্রস্তুতি নিয়ে রাখার জন্য এক বৈঠকে বলা হয়েছে।

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখালের নীল জলের টানে অনেকে ঘুরতে যান
ছবি: আনিস মাহমুদ

পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা সাধারণত সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র জাফলং, মায়াবী ঝরনা, সাদা পাথর, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, পান্তুমাই, লালাখাল ও চা-বাগান যান। এ ছাড়া সিলেটের বিভিন্ন পাহাড়, ঝরনা, শাহজালাল (রহ.) এবং শাহপরান (রহ.) মাজারে আসেন। বছরের সব সময়ই সিলেটে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। তবে ঈদ বা ছুটির দিনগুলোয় পর্যটকদের ভিড় জমে। এ সময় অন্যান্য জেলার ছাড়াও স্থানীয় পর্যটকেরাও সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় ঘুরে বেড়ান।

বৃষ্টি হলে সিলেটের পর্যটনস্থলগুলো সৌন্দর্য মেলে ধরে। এবার তা-ই হচ্ছে। সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র রাতারগুল জলাবনসংলগ্ন রাতারগুল গ্রামের বাসিন্দা আমির আলী বলেন, সম্প্রতি কয়েক দফা বৃষ্টিতে রাতারগুলের পানি বেড়েছে। বানের মধ্যের গাছগাছালি নতুন রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে। ঈদে পর্যটকদের বরণ করতে তাঁরা প্রস্তুত রয়েছেন। বনের ভেতরে পরিবেশ পর্যটকদের মুগ্ধ করবে।

ছুটির দিনে গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে ঘুরতে যান অনেকে

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলাতেই বেশির ভাগ পর্যটনকেন্দ্র। এর মধ্যে জাফলং, মায়াবী ঝরনা, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, পান্তুমাই। পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছন্দে যাতে ঘুরে বেড়াতে পারেন, সে জন্য দুই দিন আগে স্থানীয় পর্যটন উন্নয়ন কমিটির সভা হয়েছে। সভায় পুলিশ প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ, বিজিবির প্রতিনিধি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এতে জাফলংয়ে বেড়াতে গিয়ে পর্যটনকেন্দ্রে দোকানপাটের কারণে হাঁটাচলায় যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্য পর্যটনকেন্দ্রের দোকানপাট অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকবে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা চালাবেন; পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের সহযোগিতায় একটি দল প্রস্তুত থাকবে।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও সুনজিত কুমার চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবীরা সার্বক্ষণিক সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র এলাকায় তৎপর থাকবেন। ধারণা করা হচ্ছে, ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন ৫০ হাজারের অধিক পর্যটক সাদা পাথরের সৌন্দর্য উপভোগ করবেন।