লোহাগাড়ায় কাজে আসছে না কোটি টাকার সেতু
দুই পাশে ১৫০ ফুটের মতো সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলেই সেতুটি মূল সড়কের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। তবে সেটি না করায় পাকা সেতুটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে আড়াই বছর আগে। তবে সড়কের সঙ্গে এটি যুক্ত করা হয়নি। এ কারণে কোটি টাকার সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। সেতুটিতে জন্মেছে শেওলা, খসে পড়ছে পলেস্তারা।
এই সেতুটি অবস্থিত চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের হিন্দুপাড়ার জামছড়ি খালের ওপর। গ্রামীণ রাস্তায় সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৯৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয়ে জামছড়ি খালের ওপর সেতুটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়।
২০২১-২২ অর্থবছরে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। নির্মাণকাজ পরিচালনার দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাশেম ব্রাদার্স। তবে প্রতিষ্ঠানটির হয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন উপজেলা সদরের বাসিন্দা মিনহাজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ধরে তিন কিলোমিটার উত্তরে বার আউলিয়া গেট। সেখান থেকে বার আউলিয়া সড়ক ধরে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ৬ কিলোমিটার এগোলেই চরম্বা দিঘির কোণ এলাকা। সেখানে দিঘির পাড়া সড়ক নামে একটি গ্রামীণ সড়ক ধরে ১ কিলোমিটার উত্তরে গেলেই সেতুটির দেখা মেলে।
আগে এই এলাকাটিতে সেতু ছিল না। এ কারণে এলাকাবাসীকে দুর্ভোগে পড়ত হতো। দুর্ভোগ কমাতে খালের ওপর পাঁচ বছর আগে বেইলি সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এরপর আড়াই বছর আগে এর পাশেই পাকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, পাকা সেতুটির খুব কাছেই রয়েছে সড়ক। দুই পাশে ১৫০ ফুটের মতো সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলেই সেতুটি মূল সড়কের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। তবে সেটি না করায় পাকা সেতুটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পাশে স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে নির্মিত একটি বেইলি সেতু দিয়ে লোকজন চলাচল করছে।
বাসিন্দারা জানান, আগে এই এলাকায় সেতু ছিল না। এ কারণে এলাকাবাসীকে দুর্ভোগে পড়ত হতো। দুর্ভোগ কমাতে খালের ওপর পাঁচ বছর আগে বেইলি সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এরপর আড়াই বছর আগে এর পাশেই পাকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দিঘির পাড়া সড়কটি চরম্বা ইউনিয়নের সঙ্গে পদুয়া ইউনিয়নের আঁধারমানিক গ্রামকে সংযুক্ত করেছে। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে কয়েক হাজার পথচারী ও কয়েক শ গাড়ি চলাচল করে। পাশের বেইলি সেতুটি বর্তমানে দুর্বল হওয়ায় যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ, তা ছাড়া বেইলি সেতুটি নিচু হওয়ায় বর্ষাকালে পানিতে ডুবে যায়। তখন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে দ্রুত পাকা সেতুটি সড়কের সঙ্গে সংযোগ করে চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া জরুরি।
ঠিকাদারের দায়িত্ব ছিল সেতুটি সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া। এ কাজের জন্য প্রকল্পেই বরাদ্দ থাকে। জনসাধারণের দাবির মুখে আড়াই বছর আগে সেতুটি নির্মাণ হলেও দুর্ভোগ এখনো রয়ে গেছে।
চরম্বা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সৈয়দ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঠিকাদারের দায়িত্ব ছিল সেতুটি সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া। এ কাজের জন্য প্রকল্পেই বরাদ্দ থাকে। জনসাধারণের দাবির মুখে আড়াই বছর আগে সেতুটি নির্মাণ হলেও দুর্ভোগ এখনো রয়ে গেছে। বিষয়টি আমরা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে সেতুর নির্মাণকাজ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মিনহাজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেতুটির প্রস্থ ১৮ ফুট। তবে প্রকল্পে সংযোগ সড়কের প্রস্থ আছে ১২ ফুট। আমরা দুইবার কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধার মুখে ফিরে এসেছি। স্থানীয় লোকজনের দাবি, সেতুর প্রস্থের সমান ১৮ ফুট করে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নাহিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি উপজেলায় যোগদানের আগেই সেতুটি উদ্বোধন করা হয়েছে। বিষয়টি আগে জানতাম না, সম্প্রতি স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। দ্রুত সেতুটি চলাচলে উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’