৫২ একর সম্পত্তি বেদখল

বেদখল হওয়া জায়গা চিহ্নিত করে দখলদারদের তালিকা করা হয়েছে। তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে জেলা পরিষদের জায়গায় স্থাপিত হয়েছে পলাশবাড়ী মহিলা কলেজ
ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধা জেলা পরিষদের মালিকানাধীন প্রায় ৫২ দশমিক ৪১ একর জমি বেহাত হয়ে রয়েছে, যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। এসব জমি এলাকার প্রভাবশালী ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভোগদখল করছে।

এসব জমি উদ্ধারে পরিষদের কোনো পদক্ষেপ নেই। তবে জেলা পরিষদ বলছে, বেহাত হওয়া জায়গা চিহ্নিত করে দখলদারদের তালিকা করা হয়েছে। তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

১৯৮৮ সালের ৮ আগস্ট গাইবান্ধা জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিষদের মোট জায়গা ১ হাজার ৯৪৫ শতক দশমিক ৭২ একর। এর মধ্যে রাস্তা ১ হাজার ৬৫২ দশমিক ৮৬ একর, ডাঙা ৪৭ দশমিক ৫৯ একর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৯ দশমিক ৭ একর, নদী ১৯৬ দশমিক ৮ একর, পুকুর ১৯ দশমিক ৪৫ একর ও ইন্দারা শূন্য দশমিক ৬৬ একর।

পরিষদের করা দখলদারদের তালিকায় উল্লেখ করা হয়, পরিষদের মোট জায়গার মধ্যে প্রায় ৫২ দশমিক ৪১ একর বেহাত হয়ে গেছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০ একর, পলাশবাড়ীতে ২ দশমিক ৬০ একর, গোবিন্দগঞ্জে ১৩ দশমিক ২৬ একর, সাঘাটায় ৩ দশমিক ৭৯ একর, সাদুল্যাপুরে ৯ দশমিক ৩০ একর, সুন্দরগঞ্জে ১৩ দশমিক ৪১ একর ও ফুলছড়িতে শূন্য দশমিক ৫ একর।

১৯৮৮ সালের আগে গাইবান্ধা জেলা পরিষদ বৃহত্তর রংপুর জেলা পরিষদের আওতায় ছিল। সেখান থেকে পরিষদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হতো। ওই সাল থেকেই পরিষদের জমি বেহাত হওয়া শুরু হয়। তবে ২০০৫ সাল থেকে বেহাত হওয়া বেড়ে যায়। এ পর্যন্ত প্রায় ৫২ দশমিক ৪১ একর বেহাত হয়ে গেছে। এসব জায়গায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে জেলা পরিষদের ক্যাম্পাসে ৩৫ শতক জায়গায় গাইবান্ধা এলজিইডির ভবন রয়েছে। এ ছাড়া ৩ দশমিক ৪৪ একর জায়গায় গোবিন্দগঞ্জ থানা (পুলিশ স্টেশন), দশমিক ৪৭ একরে পলাশবাড়ী সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, দশমিক ৩৮ একরে পলাশবাড়ী মহিলা কলেজ নির্মিত হয়েছে।

এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার (ওসি) শামসুল আলম শাহ বলেন, ‘আমি সদ্য যোগ দিয়েছি। এ বিষয়ে কিছু জানি না।’ তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জেলা পরিষদ ও থানা দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই পুলিশ কার্যালয় থেকে জায়গাটি ইজারা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। এই মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এর সমাধান করবে।

দখল প্রসঙ্গে পলাশবাড়ীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম ফয়েজ উদ্দিন বলেন, সিএস খতিয়ান মূলে জায়গাটি ছিল ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের। পরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে আসে। এসএ খতিয়ান ছিল বাংলাদেশ সরকারের নামে। ১৯৬২ সালে ১ নম্বর খাস খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত হয়। ১৯৮৯ সালে এই জমি উপজেলা ভূমি অফিসকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। এ হিসাবে ভূমি অফিস ব্যবহার করছে। জেলা পরিষদ সিএস খতিয়ান বলে জায়গাটি দাবি করছে। বিআরএস খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রকাশ হয়নি। তাই রংপুর আঞ্চলিক সেটেলমেন্ট অফিসে আপত্তি দেওয়া হয়েছে, যাতে জায়গাটি ভূমি অফিসের নামে রেকর্ডভুক্ত করা হয়।

একই বিষয় পলাশবাড়ী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, জেলা পরিষদের জায়গাটি কলেজের নামে ইজারা নেওয়া ছিল। পরে আর নবায়ন করা হয়নি। তবে নবায়ন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এদিকে অনেকে পরিষদের জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন বলেও তালিকায় উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে সাঘাটা উপজেলায় মোট ৩ দশমিক ৭৯ একর জায়গার মধ্যে ১ দশমিক ৯৬ একর বেহাত হয়ে গেছে। উপজেলার বোনারপাড়া এলাকায় মনজুর চৌধুরী ও তাঁর লোকজন এই জায়গা ভোগদখল করছেন। মনজুর চৌধুরী বলেন, ‘আমার চাচা তৎকালীন রংপুর জেলা বোর্ডের মেম্বর ছিলেন। ১৯৬২ সালে আমাদের নামে রেকর্ড হয়। এই রেকর্ড মূলে আমরা ভোগদখল করছি। এ নিয়ে মামলা বিচারাধীন আছে।’

এ বিষয়ে গাইবান্ধা নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলামের অভিযোগ, পরিষদের কোনো কোনো কর্মকর্তার আমলে তদারকির অভাব ও কোনো কোনো কর্মকর্তার যোগসাজশে এসব সরকারি জায়গা বেহাত হয়েছে। জায়গা উদ্ধারেও তাঁদের জোরালো ভূমিকা নেই।  

এসব বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, জায়গা উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দখলদারদের দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হচ্ছে। উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে।