সোনারগাঁয়ে র‌্যাবের অভিযানে স্থানীয়দের হামলার অভিযোগ, গুলিতে বৃদ্ধ নিহত

স্বামী আবুল কাশেমের মৃত্যুতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী রমিজা বেগম। আজ শনিবার দুপুরে সোনারগাঁ উপজেলার বরগাঁও এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আবুল কাশেম (৬৫) নামের এক বৃদ্ধ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। আসামি ধরতে গিয়ে র‌্যাব পরিচয়ে একদল সাদা পোশাকধারী লোক তাঁকে গুলি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্ত্রী রমিজা বেগম।

গতকাল শুক্রবার দিনগত রাত দেড়টায় উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের বরগাঁও এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত আবুল কাশেম ওই এলাকার প্রয়াত কদম আলীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন বাঁশ বেতের হস্তশিল্পী। তার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এই ঘটনায় হুমায়ুন কবির (৪৩) নামের আরও এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে র‌্যাব-১১–এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার সোনারগাঁয়ে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনার মূল সন্দেহভাজন আসামি সেলিমকে আটক করতে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। আসামিকে আটক করে নিয়ে আসার সময় র‍্যাবের ওপর হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে র‍্যাব বাধা দেয়। এ সময় স্থানীয়রা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে র‍্যাবের ওপর হামলা চালায়। এতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। পরে আসামিকে আটক করে নিয়ে আসেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা তানভীর মাহমুদ বলেন, ‘শনিবার (১৮ মার্চ) সকালে আমরা জানতে পারি একজন মারা গেছেন। তবে তিনি কিভাবে মারা গেছেন তা আমরা নিশ্চিত না। এ ঘটনায় আমাদের চার জন র‍্যাব সদস্য আহত হয়েছেন।’

সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন আজ শনিবার প্রথম আলকে বলেন, দিবাগত রাত ৩টা ১০ মিনিটে মো. দ্বীন ইসলাম নামক এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা করে জানা যায় হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাভির ওপরে একটি বুলেটের চিহ্ন আছে। হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় দ্বীন ইসলাম নিজেকে বৃদ্ধের ছেলে পরিচয় দিয়েছেন।

আজ সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী রমিজা বেগমকে পাওয়া যায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত দেড়টার দিকে তিনি ও তাঁর স্বামী আবুল কাশেম শৌচাগারে যেতে বের হন। এ সময় বাড়ির পাশেই চিৎকার–চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পান। তাঁরা সেখানে এগিয়ে গিয়ে দেখেন শার্ট ও গেঞ্জি গায়ে একদল লোক সেলিম নামের এক তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সেলিম কান্নাকাটি করছেন। এ সময় আবুল কাশেম ওই লোকদের কাছে তাঁদের পরিচয় জানতে চান। সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা তাঁকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন, সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। মারধরের পর আবুল কাশেম ক্ষিপ্ত হয়ে চিৎকার–চেঁচামেচি করেন এবং সাদা পোশাকধারীদের গালাগাল দেন। এ সময় সাদা পোশাকধারীদের একজন নিজেদের র‌্যাব পরিচয় দিয়ে বৃদ্ধের পেটে গুলি করেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে স্থানীয় তিনজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গভীর রাতে গুলির শব্দের পর এলাকায় ডাকাত পড়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। তখন স্থানীয় লোকজন বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলে ওই সাদা পোশাকধারীরা তাঁদের উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়েন। এ সময় হুমায়ুন কবীরের (৫৮) পায়ে গুলি লাগে। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া হুমায়ুন কবিরের গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আহত হুমায়ুন কবির পেশায় একজন ফার্মেসি ব্যবসায়ী। হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে আছেন ছেলে মো. সজিব। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে তার দুই পায়ে অস্ত্রোপাচার হয়েছে। দুই পা থেকে মোট তিনটি বুলেট বের করা হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে মো. সজিব বলেন, ‘গ্রামে ডাকাত পড়েছে শুনে আর সবার মতো বাবাও বাড়ির বাইরে বের হয়েছিলেন। সাদা পোশাকধারীদের কাছে পরিচয় জানতে চাইলে তারা ঠিকঠাক পরিচয় দেননি। উল্টো বাবার দুই পায়ে গুলি করেছেন। একজন বৃদ্ধ মানুষকে গুলি করে খুন করেছেন। আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছেন। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।’

সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আহসানুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি গুলিবিদ্ধ লাশ আছে। কিন্তু কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে এখনো জানা যায়নি। তাঁরা খোঁজ নিচ্ছেন।