জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হয়েছে, পড়াশোনার সুযোগ হবে কি তারিনের

মা-বাবার সঙ্গে সরাইলের অদম্য মেধাবী তারিন আক্তার। তিনি এ বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এ ইউনিট (বিজ্ঞান বিভাগ) থেকে অংশ নিয়ে মেধাতালিকায় ১২৭তম হয়েছেনছবি: প্রথম আলো

সংসারে অভাব ছিল। তাই অন্যদের মতো স্বাভাবিক সুবিধা নিয়ে পড়ালেখা করার সুযোগ পাননি তারিন আক্তার। কিন্তু অদম্য মনোবল আর পরিশ্রম তাঁকে চূড়ান্ত লড়াইয়ে অন্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে দিয়েছে। তারিন এ বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এ ইউনিট (বিজ্ঞান বিভাগ) থেকে অংশ নিয়ে মেধাতালিকায় ১২৭তম হয়েছেন। তবে তাঁর শঙ্কা পড়ালেখার খরচ চালিয়ে নেওয়া নিয়ে।

তারিন আক্তারের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মীর জয়নাল উদ্দিন, মায়ের নাম শাকিলা আক্তার। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী তারিন অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পায়। এরপর কুট্টাপাড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পায়। ২০২৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ থেকেও বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন তারিন।

তারিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিলাম বলে এসএসসি পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়তে পেরেছি। কিন্তু এসএসসিতে বৃত্তি না পাওয়ায় অর্থকষ্টে পড়তে হয়েছে। আমার বাবার পক্ষে পরিবারের সবার খাবার জোগাড় করতেই কষ্ট হয়। সে জন্য পড়ালেখার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়িয়েছি। তা দিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ ও সংসারে সহায়তা করেছি। নিজের প্রাইভেট পড়ার মতো টাকা ছিল না বলে স্কুলের স্যাররা আমাকে বিনা বেতনে পড়িয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবিষ্যতে পড়ালেখার খরচ নিয়ে আমি দুশ্চিন্তায় আছি।’

তারিনেরা তিন বোন, এক ভাই। তিনি সবার বড়। তাঁর বাবা জয়নাল উদ্দিন দিনমজুরের কাজ করেন। মা গৃহিণী। সন্তানদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন জয়নাল উদ্দিনের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল আটটা থেকে বিকেল পর্যন্ত অন্যের কাজ করি। সারা দিনে আয় হয় ৩০০ থেকে ৪০০ ট্যাহা। এ দিয়ে সংসারই চলে না। দেড় শতক ভিটাবাড়ি ছাড়া আর কিছু নাই। চার ছেলে–মেয়ের লেহাপড়া করাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। মেয়েডা বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে চাইছিল আমি ট্যাহা দিতে ফারি নাই। এখন মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব না। কারণ, ভর্তির খরচ, বইখাতা কেনা, থাকা-খাওয়া সব মিলিয়ে মেলা ট্যাহার দরকার।’

কুট্টাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, তারিনের পরিবার খুবই দরিদ্র। সে প্রতিকূল পরিবেশে পড়াশোনা চালিয়েছে। পড়াশোনার প্রতি তার প্রচণ্ড ঝোঁক। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান কারও সমর্থন পেলে তারিন উচ্চশিক্ষা লাভ করে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করতে পারবে।