ফসলি জমিতে বিদ্যুতের টাওয়ার। উচ্চতা ১৭০ ফুট। টাওয়ারের ওপরে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। সেখানে বসে ছিলেন এক যুবক। স্থানীয় লোকজন তাঁকে নেমে আসতে বললেও তিনি কর্ণপাত করেননি। অবশেষে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে নানা তোড়জোড় শুরু করেন। শেষে মাইকে আজান বাজানো হলে ওই যুবক টাওয়ারের ওপর থেকে নিচে নেমে আসেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের কোড্ডা এলাকায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ওপর বসে থাকা ওই যুবকের নাম নাসির উদ্দিন। তিনি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ইয়ারপুর গ্রামের সিরাজ বাবুর্চির ছেলে। যুবকের হাতে ও পেটে কাটা দাগ আছে। তাঁর পরনে ছিল গোলাপি রঙের পায়জামা ও পাঞ্জাবি।
স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার কোড্ডা গ্রামে তিতাস সেতুর পশ্চিম দিকের উত্তর-দক্ষিণে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন আছে। কৃষিজমিতে ওই টাওয়ারের উচ্চতা প্রায় ১৭০ ফুট। লাইনটি ২৩০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন। আজ সকাল আটটার দিকে বিদ্যুতের ওই টাওয়ারের ওপরে ৩০-৩২ বছরের ওই যুবক নাসির বসে জিকির করছিলেন। মাঝেমধ্যে টাওয়ারের এক পাশ থেকে অন্য পাশে আসা-যাওয়া করছিলেন। বিষয়টি দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন সেখানে জড়ো হন। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন চিৎকার করে তাঁকে টাওয়ার থেকে নেমে আসার অনুরোধ করেন। কিন্তু যুবক নাসির স্থানীয়দের কথায় সাড়া দেননি। পরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হ্যান্ডমাইকে ওই যুবককে নেমে আসার অনুরোধ করেন। এভাবে তিন ঘণ্টা পার হয়। বেলা ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা হ্যান্ডমাইকে আজান বাজানো শুরু করেন। আজানের শব্দ শুনে টাওয়ারের ওপর থেকে ওই যুবক নেমে আসেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রুবায়েদ আহমেদ বলেন, সকাল নয়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, ওই যুবককে বিদ্যুতের টাওয়ারের ওপরে বসে জোরে জোরে জিকির করছেন। সবাই তাঁকে নেমে আসার অনুরোধ জানালেও তিনি নামেননি। জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) ফোন করে তাঁকে পুলিশে দিতে চেয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু পুলিশ না আসায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁকে ছেড়ে দিয়েছেন।
টাওয়ার থেকে নিচে নামার পর নাসির উদ্দিন বলেন, একটি শক্তি (জিন) তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে গাছে ওঠায়, টাওয়ারে ওঠায় এবং পানিতে চুবায়; মারে, কষ্ট দেয়। আজান দিলে ছেড়ে দেয়।’ এ জন্য তিনি নিজেও শান্তি পান না বলে জানান।
আখাউড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মুনিম সারোয়ার বলেন, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই যুবককে বিদ্যুতের টাওয়ারের ওপরে বসে থাকতে দেখেন। সকাল আটটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী নাজমুল ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে টাওয়ার থেকে নেমে আসতে বলেন। বেলা ১১টার দিকে মুঠোফোন থেকে হ্যান্ডমাইকে আজান বাজালে ওই যুবক টাওয়ার থেকে নেমে আসেন। তিনি বলেন, ‘এর আগের দিন বিকেলেও ওই যুবক টাওয়ারের ওপরে উঠেছিল। আমরা তাকে নামিয়ে এনেছিলাম। ২০ দিন আগেও সদর উপজেলার বড়িশল এলাকায় বিদ্যুতের টাওয়ারে উঠেছিল ওই যুবক। তার মানসিক সমস্যা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একপর্যায়ে ওই যুবক ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী প্রকৌশলী সাইমুন আলম প্রথম আলোকে বলেন, কোড্ডা এলাকার বিদ্যুতের টাওয়ারটির উচ্চতা প্রায় ১৭০ ফুট। এখানে জাতীয় গ্রিডের ২৩০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন গেছে। টাওয়ারের ওপর যেখানে গেলে তিনি বিদ্যুতায়িত হতে পারতেন, সেখানে হয়তো তিনি যাননি। কারণ, একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা ও দূরত্বে বিদ্যুতের তার থাকে।