হবিগঞ্জের খোয়াই নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের ওপর ‘অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বনায়ন’ প্রকল্পের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন এর সুবিধাভোগীরা। অথচ এ গাছ বিক্রির অর্ধেক টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা। এলাকাবাসী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ এ প্রকল্পের যথাযথ তদারক করছে না। এ তিন বিভাগ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে একে অপরের ওপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছে।
তিন পক্ষ একে অপরের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, নিয়ম হচ্ছে, নিজের ভূমির গাছ কাটলেও বন বিভাগের অনুমোদন লাগে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। খোয়াই নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের উভয় পাড়ের গাছগাছালি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন উপকারভোগীরা। এখানে ভূমির মালিক পাউবোর যেমন তদারকি নেই, তেমনি পরিবেশ অধিদপ্তর বা বন বিভাগের কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
পাউবো জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খোয়াই নদের শহর অংশের মাছুলিয়া এলাকা থেকে নদের উজানের শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার নদের দুই পাড়ে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বনায়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালে হাতে নেওয়া এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল নদের পাড়ের সুরক্ষা নিশ্চিত, সবুজায়ন বৃদ্ধি ও নদের পারের বাসিন্দাদের স্বনির্ভর করা।
অংশীদারত্বের ভিত্তি হলো নদের পারে বসবাসরত ব্যক্তিকে নদপাড়ের কিছু অংশ শনাক্ত করে দেওয়া হয় বনায়নের জন্য। এ অংশে ওই ব্যক্তি নিজের পছন্দের নানা জাতের গাছ রোপণ করে তা পরিচর্যা করবেন। এ গাছ উপযুক্ত হলে তা কেটে বিক্রি করার আগে গাছের মূল্য নির্ধারণ করে এর অর্ধেক টাকা সরকারের কোষাগারে জমা করা হয়। আর বাকি অংশ প্রকল্পে যুক্ত ওই ব্যক্তি পান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ২৪ বছর আগে যে গাছগাছালি রোপণ করা হয়েছিল, এখন সেই গাছগাছালির চার ভাগের এক ভাগ বনায়নও নেই। সব উজাড় হয়ে গেছে। যাঁরা প্রকল্পের সদস্য, তাঁরা নিজেদের ইচ্ছেমতো গাছগাছালি কেটে নিয়ে গেছেন। ফলে নদের পাড়ে এখন গাছগাছালি নেই।
নদের শায়েস্তানগর এলাকায় গেলে চোখে পড়ে, নদের ডান পাড়ে ১০ থেকে ১২টি গাছ কাটা। এ পথে হেঁটে আরও একটু এগোলেই (পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পেছনে) নদের পাড়ে দেখা গেল আরও ছয়-সাতটি গাছ কাটা। সেখানে গাছের গোড়াগুলো এখনো রয়ে গেছে। পাউবোর আবাসিক এলাকার পেছনেও অসংখ্য গাছ কাটা অবস্থায় দেখা যায়। এলাকার লোকজন বলেন, নদের দুই পাড়ে জেলা সদরের মাছুলিয়া থেকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন সেতু পর্যন্ত কয়েক হাজার গাছ বিভিন্ন সময় কেটে নিয়ে গেছেন প্রকল্পের সদস্যরা।
গতকাল শুক্রবার উপজেলা পরিষদের পেছনের অংশে (নদের জায়গায়) দু-তিনটি কড়ইগাছ কাটছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিস মিয়া (৫০)। কার গাছ কাটছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, জায়গা সরকারি হলেও এ গাছগুলো তিনি রোপণ করেছিলেন। নিজের প্রয়োজনে তা কাটছেন। অনুমতি নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমোদন নিতে হয়, তা তাঁর জানা নেই।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, তিনি নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানতে হবে, কোথায় গাছ কাটা হচ্ছে। তবে গাছ কাটা হলে তা ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব বন বিভাগের।
জেলা বন বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. মারুফ হোসেন বলেন, নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে, এ বনায়ন বন বিভাগ নাকি পাউবো করেছে। মূলত ভূমির মালিকের দায়িত্ব বিষয়টি দেখভাল করার।
পরিবেশ অধিদপ্তর হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, নদের বাঁধ থেকে যে গাছ কাটা হচ্ছে বা পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, সেটা দেখাশোনার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের নয়, সেটা দেখার দায়িত্ব বন বিভাগের।