উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত : ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল নিহত মাসুমার
ঢাকার উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া কর্মচারী মাসুমা বেগমকে (৩৮) তাঁর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা ইউনিয়নের বাটামারা গ্রামে জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
এর আগে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
পারিবারিক সূত্র জানায়, গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে মাসুমার লাশবাহী গাড়ি গ্রামে পৌঁছায়। স্বামী মো. সেলিম একটি বায়িং হাউসে গাড়ির চালক পদে চাকরি করেন। বিয়ের এক বছর পরে ভাগ্যের সন্ধানে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা চলে যান। ৫ বছর আগে আয়া পদে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে চাকরি হয় মাসুমার। এই স্কুলের বেতন দিয়ে তাঁদের সংসারে কিছুটা হলেও সচ্ছলতা আসে। মাসুমা–সেলিম দম্পতির বড় মেয়ে সুমাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। তাঁদের ছোট ছেলে মো. মানসুর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
শোকে বিহ্বল স্বামী মো. সেলিম (৪১) বলেন, ‘ও (মাসুমা) যদি চাইত, পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে নিজেকে বাঁচাতে পারত। কিন্তু নিজের কথা না ভেবে স্কুলের শিশুদের বাঁচাতে গিয়ে নিজেই অগ্নিদগ্ধ হয়। ওর ভীষণ ইচ্ছে ছিল ছেলেটাকে মানুষের মতো মানুষ করবে। লেখাপড়া করাতে চেয়েছিল। ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু অভাবের কারণে অনেক কিছুই পারেনি। তিল তিল করে সে স্বপ্ন পূরণ করছিল। সে স্বপ্ন একদম ভেঙে গেছে। দুটি সন্তান এতিম হয়ে গেল।’
সেলিম বলেন, ‘আমার তো কিছু নাই, সব শেষ হয়ে গেছে। আমার ও আমার স্ত্রীর অনেক আশা, অনেক স্বপ্ন ছিল। ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাব। আমরা তো এমনিতেই অসহায় পরিবার। আমার স্ত্রীকে হারিয়ে এই অসহায়ের মধ্যে আরও অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার ছেলেটা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। সেই সন্তানকে কীভাবে মানুষ করব, এটাই বুঝতে পারছি না।’
সেলিম আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন বেলা ১টা ১০ মিনিটে ফোনে খবর পাই, স্কুলের ওপর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখি, আমার স্ত্রী ইমার্জেন্সিতে। সেদিন বেলা আড়াইটায় ওর সঙ্গে শেষ কথা হয়। ও আমার কাছে ক্ষমা চায়, সন্তানদের খেয়াল রাখতে বলে। ও বলে, “আমি হয়তো আর বাঁচব না।”’
মাসুমা বেগমের জানাজায় অংশ নেন বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হানুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এই শোক আমরা সবাই ভাগ করে নিয়েছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সরকারি সহায়তা যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়া হবে।’