অনলাইনে কর পরিশোধের কথা জানেন না অনেকে

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ডিজিটাল পদ্ধতিতে বা অনলাইনে গৃহকর এবং ট্রেড লাইসেন্স ফি জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু করেছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এই দুই বছরেও অনলাইনে গৃহকর পরিশোধে নগরের ভবনমালিকদের আগ্রহ কম। তাঁদের আগ্রহ তৈরির বিষয়েও সিটি করপোরেশনের দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। বিদায়ী ও চলতি অর্থবছরে অনলাইনে আদায় হওয়া গৃহকরের পরিমাণ ১ শতাংশের কম।

অনলাইনে গৃহকর ও ট্রেড লাইসেন্স পদ্ধতি চালুর জন্য এটিএন অ্যান্ড আরকে সফটওয়্যার লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এই পদ্ধতি চালু রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে বছরে দিতে হয় ৮৩ লাখ টাকা। কিন্তু ট্রেড লাইসেন্স খাতের আদায় সন্তোষজনক হলেও গৃহকর আদায়ের ক্ষেত্রে সে চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) আদায় হয়েছিল ৬৯ লাখ টাকা।

চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত (২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি) আদায় হয়েছে ৮৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা, যা মোট গৃহকর আদায়ের তুলনায় মাত্র দশমিক ৬ শতাংশ।
অনলাইনে কর আদায় কম হওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ গত ডিসেম্বরে প্রতিবেদন দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আটটি রাজস্ব সার্কেল। একেকটি সার্কেল ৮ থেকে ১০টি করে সমস্যার কথা উল্লেখ করেছে।

অনলাইনে ‘নগণ্য’ আদায়

গৃহকর ও ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায়ের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন রয়েছে। ভবনমালিকদের কাছ থেকে গৃহকর আদায়ের ক্ষেত্রে হয়রানি ও বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে করপোরেশনের কর্মীদের বিরুদ্ধে। গৃহকর, ট্রেড লাইসেন্সসহ রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনার জন্য অটোমেশন বা অনলাইন প্রক্রিয়া চালু করতে দীর্ঘদিন ধরে তাগাদা দিয়ে আসছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অবশ্য তা মানার ব্যাপারে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি সিটি করপোরেশন।
তবে এক প্রকার বাধ্য হয়ে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করে সিটি করপোরেশন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গৃহকর খাতে আদায় করেছিল ১৮৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে অনলাইনে আয় হয় মাত্র ৬৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা মোট আদায়ের শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ।

ওই অর্থবছরে ট্রেড লাইসেন্স খাতে আদায় হয়েছিল ২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে অনলাইনে আসে ৮৭ লাখ ১২ হাজার টাকা, যা মোট আদায়ের মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ। তবে চলতি অর্থবছরে ট্রেড লাইসেন্স খাতে অনলাইনে অর্থ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে। ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আদায় হয়েছে ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

সিটি করপোরেশনের এই সেবার ব্যাপারে নগরের ১০ জন ভবনমালিকের সঙ্গে কথা হয়। কিন্তু তাঁরা সবাই জানান, অনলাইনে গৃহকর পরিশোধের বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা গৃহকর নিতে এলেও অটোমেশন প্রক্রিয়া বা অনলাইনে গৃহকর পরিশোধের বিষয়টি তাঁদের অবহিত করেন না। অনলাইনে গৃহকর দিতে পারলে খুব ভালো হতো। কেননা এখন করপোরেশনের লোকজন যখন-তখন আসেন। অনেক সময় তাঁদের ‘বকশিশ’ দিতে হয়। অনলাইনে হলে এসব ঝামেলা থাকবে না। অনলাইন তো দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে টাকা দেওয়া যাবে। সিটি করপোরেশনের উচিত এই ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা চালানো।

তবে সিটি করপোরেশনের এক কর কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, সিটি করপোরেশনের গৃহকর পরিশোধে মানুষের অনীহা রয়েছে। নোটিশ দিয়ে এবং কর আদায়কারী পাঠিয়েও গৃহকর আদায় করা কঠিন হয়ে যায়। সেখানে মানুষ কেন নিজের ইচ্ছায় অনলাইনে গৃহকর পরিশোধ করবেন।

যেসব কারণে কম আদায়

অনলাইনে গৃহকর ও ট্রেড লাইসেন্স ফি প্রত্যাশা অনুযায়ী আদায় না হওয়ার কারণ চিহ্নিত করতে সম্প্রতি উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের আটটি রাজস্ব সার্কেল বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

রাজস্ব সার্কেল-১ (কর)–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করদাতাদের মধ্যে অনলাইনে গৃহকর পরিশোধ করার ইচ্ছা থাকলেও অনলাইন কার্যক্রমে ঘাটতি রয়েছে। এ জন্য অনলাইনে কর পরিশোধ করা যাচ্ছে না। রাজস্ব সার্কেল-১ (লাইসেন্স) এর প্রতিবেদনে ১১টি সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দ্রুত গতির নেট সংযোগ দিতে হবে। অনুমতিপত্র পরিদর্শকদের এই পদ্ধতির ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অনলাইন ট্রেড লাইসেন্সে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড ও থানা উল্লেখ করতে হবে।

রাজস্ব সার্কেল-৩ (কর)–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোল্ডিংয়ের কিছু তথ্য বিশেষ করে স্থাপনার বিবরণী সফটওয়্যারে আপডেট করা হয়নি। ত্রৈমাসিক (তিন মাসের) গৃহকর তথ্য দেওয়া হয় না। ই-হোল্ডিং নম্বর সম্পর্কে সার্কেল কার্যালয়ে কোনো তথ্য নেই।

অনলাইনে প্রত্যাশা অনুযায়ী গৃহকর আদায় না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইনে গৃহকর আদায় বাড়াতে তাঁদের নানা পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে দুই থেকে তিনটি ওয়ার্ডে অনলাইনে গৃহকর পরিশোধ বাধ্যতামূলক করার চিন্তা রয়েছে। আর অনলাইনে যাতে মানুষ টাকা জমা দেন, সে জন্য রাজস্ব সার্কেলগুলোতে আলাদা জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।