চাকরির দাবিতে আবার অনশনে বসে অসুস্থ ঢাবির দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শাহীন আলম চাকরি দাবিতে রোববার সকালে আবারও অনশনে বসেন। ঝিনাইদহ শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্নাততোত্তর শেষ বর্ষের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শাহীন আলম চাকরির দাবিতে আবার আমরণ অনশন শুরুর চার ঘণ্টা পর তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পুলিশ তাঁকে নিয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।

নিজ এলাকা ঝিনাইদহ শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে অনশনে বসেন এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী।

অনশনে বসার পর তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার তাঁকে চাকরির নিশ্চয়তা না দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এক ফোঁটা পানিও পান করবেন না। এরপর বেলা দুইটার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন শাহীন আলম।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার উপপরিদর্শক আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ওই শিক্ষার্থী অনশন করতে করতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় আমরা পাশের পুলিশ বক্সে কর্মরত ছিলাম। এরপর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি, পাশাপাশি তাঁর বাবাকে খবর দেওয়া হয়েছে।’

জানতে চাইলে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জোবায়দা আফরোজ বলেন, শাহীন আলমকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহীন আলম প্রথম আলোকে বলেন, একটু সুস্থ হলেই তিনি আবারও গিয়ে অনশনে বসবেন।

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের আলামপুর গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে শাহীন আলম এর আগে চলতি বছরের ৯ মে একই স্থানে অনশনে বসেন। দুই দিন পর প্রশাসনের কর্মকর্তারা কথা বলে তাঁর অনশন ভাঙান। এরপরও চাকরি না হওয়ায় আবার অনশনে বসেন তিনি।

আজ বেলা ১১টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার শহীদ মিনারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অনশন করছেন শাহীন আলম। এ সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এর আগেরবার চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তাঁকে অনশনস্থল থেকে নিতে আসেন। দুই দিন সার্কিট হাউসে রেখে ২৫ টাকা হারে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর ও ৫ হাজার টাকার চুক্তিতে শিক্ষকতার চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখান করে বাড়ি চলে যান।

সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে চাকরি পাচ্ছেন না অভিযোগ করে শাহীন আলম বলেন, চাকরি যদি না-ই হবে, তাহলে কেন সরকার তাঁদের পড়ালেখার সুযোগ দিল। সংবিধানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনে তাঁদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ না করার কথা বলা হয়েছে। অথচ তাঁর সরকারি চাকরির বয়সসীমা পার হয়ে গেলেও চাকরি পাচ্ছেন না।

আরও পড়ুন

২০১৫ সালে এসএসসি পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন শাহীন আলম। ২০১৯ সালে সেখান থেকে স্নাতক শেষ করে বর্তমানে স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী তিনি।

করোনাকালে ঘরে বসে দেশ-বিদেশের ২৩৯ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে অনলাইনে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন শাহীন আলম। প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবি জানিয়ে সকালে তিনি বলেন, দৃষ্টিশক্তি না থাকার পরও দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পর কেন তাঁকে বেকার থাকতে হবে? প্রতিবন্ধী বলে তিনি কোনো চাকরি পাবেন না, এটা হতে পারে না।