জামালপুরে ‘ব্যবহারিকের নম্বর যোগ না হওয়ায়’ এসএসসিতে ৪৩ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য

জামালপুর জেলার মানচিত্র

একটি বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর যোগ না হওয়ায় জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে অংশ নেওয়া তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভোকেশনাল শাখার ৪৩ পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা কেন্দ্র সচিবের গাফিলতিকে দায়ী করে লিখিত অভিযোগ করেছে।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ‘আইটি সাপোর্ট অ্যান্ড আইওটি বেসিক-টু’ বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিলেও শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিকের প্রাপ্ত নম্বর যথাসময়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাঠাননি পরীক্ষাকেন্দ্রের সচিব। এতে এই ফল বিপর্যয় ঘটেছে।

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ভোকেশনাল শাখার ছয়টি বিদ্যালয়ের ১৫৭ জন পরীক্ষার্থী চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে আইটি সাপোর্ট অ্যান্ড আইওটি বেসিক-টু বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভোকেশনাল শাখা, দত্তেরচর পুরাতন বাট্টাজোড় মীর কামাল হোসেন দাখিল মাদ্রাসা ও জানকিপুর আলিম ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ৪৩ জন শিক্ষার্থী। তারা সবাই ওই বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু ব্যবহারিক নম্বর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়নি। ফলে তারা অকৃতকার্য হয়েছে।

১২ মে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, আইটি সাপোর্ট অ্যান্ড আইওটি বেসিক-টু বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষায় ৪৩ শিক্ষার্থীর কেউ পাস করেনি। পরে শিক্ষার্থীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ব্যবহারিক পরীক্ষায় তাদের ফেল দেখানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ধারণা, ওই বিষয়ের ব্যবহারিক নম্বর বোর্ডে পাঠানো হয়নি। ফলে তাদের সবাইকে ফেল দেখানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম স্কুল অ্যান্ড কলেজের কেন্দ্র সচিবের সঙ্গে দেখা করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলে, ‘আমরা সবাই পরীক্ষায় অন্য সব বিষয়ে পাস করেছি। শুধু ওই বিষয়ে আমাদের সবার ফেল এসেছে। ওই বিষয়ে ব্যবহারিক নম্বর ছিল ৪০। সবাই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তারপরও ওই নম্বর বোর্ডে পাঠানো হয়নি। খোঁজখবর নিয়ে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। এ বিষয়ে আমরা কেন্দ্র সচিবের কাছে একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছি। কিন্তু কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রায় দেড় মাস সময় লাগবে বিষয়টি সংশোধন করতে। এত সময় লাগলে আমরা সবাই পাস করলেও কোথাও ভর্তি হতে পারব না। কারণ, এই সময়ের মধ্যে ভর্তির সময় চলে যাবে। আমাদের দাবি একটাই, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ফল সংশোধন করা হোক।’

আরেক ভুক্তভোগী সাদেকুল হাসান বলে, ‘আমরা সারা বছর লেখাপড়া করে পরীক্ষায় পাস করতে পারলাম না। আমাদের বাসা থেকে অনেক চাপ দিচ্ছে। ফেল আসার কারণে অনেকের কাছে মুখও দেখাতে পারছি না। ভুল তো আমাদের নয়। কিন্তু তার খেসারত আমরা দিচ্ছি। বিষয়টি সংশোধনের জন্য আমরা বিভিন্নজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরতেছি। প্রায় এক সপ্তাহ চলে গেছে। তারপরও বিষয়টির সংশোধন হয়নি। ভর্তিপ্রক্রিয়ার আগেই বিষয়টির সমাধান না হলে আমরা একটা বছর পিছিয়ে যাব।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর বোর্ডে পাঠানোর দায়িত্ব কেন্দ্র সচিবের। ব্যবহারিক নম্বর যোগ না হওয়ায় সবাই ফেল করেছে। কেন্দ্র সচিবের গাফিলতিতে এমনটি ঘটেছে। তারপরও যা–ই ঘটে থাকুক, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টির সমাধান করার দাবি জানাচ্ছেন তিনি।

জানতে চাইলে কেন্দ্র সচিব ও চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই বিষয়ের ব্যবহারিক নম্বর যথাযথভাবে পাঠানো হয়েছিল। তারপরও ৪৩ জনের ফেল আসে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি আশা করছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে সংশোধনী আসবে।