তিতাস উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতার নেতৃত্বে হামলা

কুমিল্লা জেলার মানচিত্র

কুমিল্লার তিতাস উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় হামলা চালিয়েছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তিতাস উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমেদ ও দুই ইউপি চেয়ারম্যানকে কিলঘুষি দেওয়া হয়। পরে সভা পণ্ড হয়ে যায়। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

গতকাল সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় তিতাস উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পরিষদের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল রাতেই কুমিল্লা উত্তর জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সারওয়ার হোসেন ওরফে বাবু (৪২) ও তিতাস উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এ কে এম কামরুল হাসান ওরফে তুষারের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৪০ জনকে আসামি করে তিতাস থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন তিতাস ইউএনওর কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. নেছার উদ্দিন।

উপজেলা প্রশাসনে আধিপত্য বিস্তার করতে চায় হামলাকারীরা। দরপত্রসহ নানা কাজের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এই কারণে মহড়া দেয়। হামলা করে। এমন ঘটনা দেশে আর একটি আছে কি না আমাদের জানা নেই। আমরা এর বিচার চাই।
পারভেজ হোসেন সরকার, তিতাস উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সভার সভাপতি

মামলার এজাহার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা ১১টায় তিতাস উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের সম্মেলনকক্ষে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা চলাকালে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে কুমিল্লা উত্তর জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সারওয়ার ও তিতাস উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুলের নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঢুকে পড়েন। তাঁরা চিত্কার-চেঁচামেচি ও গালাগাল করেন। একপর্যায়ে তাঁরা সভায় উপস্থিত তিতাস উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমেদ ফকির, বলরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুন্নবী ও সাতানী ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল হক সরকারকে কিলঘুষি মারেন। পরে সভা পণ্ড হয়ে যায়। এ ঘটনায় রাত ৮টা ১৫ মিনিটে সারওয়ারকে প্রধান আসামি করে ৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৩০-৪০ জনকে আসামি করে মামলা হয়।

তিতাস উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সভার সভাপতি পারভেজ হোসেন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সভা চলছে। হঠাৎ করে বাবু (সারওয়ার) কয়েকজন নিয়ে সভাস্থলে ঢুকে পড়েন। এরপর হট্টগোল করেন। আমাদের এক ভাইস চেয়ারম্যান, দুই ইউপি চেয়ারম্যানকে কিল-ঘুষি দেন। উপজেলা প্রশাসনে আধিপত্য বিস্তার করতে চায় হামলাকারীরা। দরপত্রসহ নানা কাজের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এই কারণে মহড়া দেয়। হামলা করে। এমন ঘটনা দেশে আর একটি আছে কি না আমাদের জানা নেই। আমরা এর বিচার চাই।’

ইউএনও নাজমুল আহসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা সারওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ওদের ঝগড়া থামাতে গেছি। এখন দেখি আমারে মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তিতাস থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খালেকুজ্জামান বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তিতাস উপজেলার রামভদ্রা গ্রামের প্রয়াত দুলাল মিয়ার ছেলে ইয়াকুব আলী ওরফে ইফাতকে (২০) গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, সভা পণ্ডকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে মামলার পর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।