২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

দাম বাড়ায় রাস্তার পাশের দোকানে মুখরোচক খাবার বিক্রি কমেছে, কষ্টে ব্যবসায়ীরা

রংপুরে সড়কের পাশের ছোট খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতা কমে গেছে। জীবিকা নিয়ে চিন্তায় এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আজ শনিবার রংপুর সরকারি কলেজ সড়কে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুর নগরের কুকরুল এলাকার বাসিন্দা আবদুল ওয়াহেদ। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ফুচকা বিক্রি করেন। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়েছে। দাম বেড়েছে ফুচকারও। কিন্তু দিন দিন বিক্রি কমে যাচ্ছে। চার মাস আগেও তাঁর দোকানে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি হতো। এখন দেড় হাজার টাকাও বিক্রি হয় না।

রংপুর সরকারি কলেজ রোডের এ ফুচকা ব্যবসায়ী কিছুদিন আগেও সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা প্লেট ফুচকা বিক্রি করতেন। বর্তমানে ২০ টাকার ফুচকা বিক্রি করছেন ৩৫ টাকায়, ৬০ টাকার বিক্রি করছেন ৮০ টাকায়। আবদুল ওয়াহেদ বলছিলেন, এখন যে টাকা বিক্রি হয়, তা দিয়ে কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করে লাভের মুখ দেখতে পারছেন না। তিন ছেলে–মেয়ের পড়াশোনার খরচসহ সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

শুধু আবদুল ওয়াহেদ নন, এমন দুরাবস্থা রংপুর নগরের বিভিন্ন এলাকার সড়কের পাশের শত শত মুখরোচক খাবার বিক্রেতাদের। ‘স্ট্রিটফুড’ নামে পরিচিত এ ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার উপক্রম হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব দোকানে ব্যবসার মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। ক্রেতাদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। ফলে দোকান খুলে সারা দিন যা বিক্রি হয়, তাতে করে লাভের মুখ দেখছেন না তাঁরা।

গতকাল শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরেজমিন রংপুর সরকারি কলেজ রোড, টাউন হল চত্বর, লালবাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়সহ আরও কিছু এলাকার এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানালেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারি কলেজ সড়কে ক্রেতাদের উপস্থিতিতে গমগম করত। দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসতেন লোকজন। অভিভাবকের সঙ্গে স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে দোকানগুলোতে প্রাণ ছিল, ছিল বেচাবিক্রি। এখন সেই বিক্রিতে ভাটা। ক্রেতাদের তেমন একটা ভিড় নেই। প্রতিটি দোকানের বিক্রিও কমে অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে।

নগরের হনুমানতলা এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলামের কলেজ রোড এলাকায় ‘মায়ের দোয়া ফুচকা হাউস’ নামের একটি দোকান রয়েছে। সংসারে রয়েছে স্ত্রী ও দুই সন্তান। তিনি বলেন, ‘এ ব্যবসা করেই বছরের পর বছর ধরে সংসারের সব খরচ হতো। এখন সেই সংসার চালানো যাচ্ছে না। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকারভেদে ফুচকার দামও বাড়াতে হয়েছে। এখন আর আগের মতো কাস্টমার আসে না। আয়রোজগারও কমে গেছে। কর্মচারীদের বেতনও উঠছে না। ভাবছি, এ ব্যবসা ছেড়ে দেব।’

সড়কের পাশের খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতা আসা কমে গেছে। আজ শনিবার রংপুর সরকারি কলেজ রোডে
ছবি: প্রথম আলো

জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গন রংপুর টাউন হল চত্বরে বছরের পর বছর ধরে চা-বিস্কুটের দোকান করে আসছেন অনেকেই। এর মধ্যে মাহবুব হোসেন অন্যতম। তাঁর দোকানকে ঘিরে সংস্কৃতিকর্মীদের চায়ের আড্ডা বসে। কিন্তু সেখানেও বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। তাঁর দোকানে প্রতিদিন বিক্রি হতো সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা। কিন্তু এখন দেড় হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। মাহবুব জানালেন, আগে রং চা বিক্রি করতেন ৫ টাকা, এখন তা ৮ টাকা। ৫ টাকার দুধ চা হয়েছে ১০ টাকা। জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। তিনি বলেন, ‘ক্রেতারা আসছেন ঠিকই। শুধু গল্প করছেন, চা পান করছেন কম, বিস্কুট বিক্রিও নেই। লাভ তো দূরের কথা, খরচও উঠছে না।’

সংস্কৃতিকর্মী মাহমুদ নাসির প্রায়ই টাউন হল চত্বরের চা-দোকানগুলোতে আড্ডা দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আয় তো বাড়েনি, বেড়েছে পণ্যের দাম। তাই এসব দোকানে চা–বিস্কুট খাওয়াও একেবারে কমিয়ে দিতে হয়েছে।’

পার্ক মোড়, সিটি বাজারের সামনে, জাহাজ কোম্পানি মোড়, লালবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় স্ট্রিটফুডের দোকানগুলোতেও ব্যবসায়ীদের দুরাবস্থা চলছে। বিক্রিবাট্টা কমে যাওয়ায় দোকানের কর্মচারীদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানানলে ব্যবসায়ীরা।