গাজীপুরে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর

শিক্ষার্থীরা কলেজের পাশের মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে সেখানে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আজ সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সালনা বাজার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের সালনায় নাসিরুদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সকালে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সালনা বাজার এলাকায় অবরোধ সৃষ্টি করে ওই কর্মসূচি পালন করেন। এতে প্রায় তিন ঘণ্টা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এ সময় শিক্ষার্থীরা গাজীপুর সদর থানা-পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করেন।

এ ঘটনার পর পুলিশ আওয়ামী লীগের দুই নেতাসহ পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নিয়েছে। তবে ওই কলেজের কোনো শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

নাসিরুদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এর মধ্যে কলেজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা অধ্যক্ষের কাছে গেলে তিনি কোনো সমাধান না করে উল্টো অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। শিক্ষার্থীদের বেতন বকেয়া থাকলে তাঁকে সবার সামনে বকঝকা করে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কলেজে ঠিকমতো ক্লাসও হয় না বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। এসব ঘটনার জেরে শিক্ষার্থীরা কয়েক দিন ধরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিনের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

এদিকে আজ সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও ওই কলেজের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান ও সালনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান ১০ থেকে ১২ জন বহিরাগত ব্যক্তিকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্ষে নিয়ে যান। এ সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ডেকে আনেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, নাজমা নাসরিন ওই ছাত্রীকে ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও চরথাপ্পড় মারেন। কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র হাসিবুল ঘটনাটি দেখে প্রতিবাদ জানান। এ সময় অধ্যক্ষের কক্ষে থাকা বহিরাগত ব্যক্তিরা হাসিবুলকে মারধর করেন।

বিক্ষোভের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করেন
ছবি: প্রথম আলো

ঘটনাটি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে অধ্যক্ষসহ আওয়ামী লীগ নেতা ও বহিরাগত ব্যক্তিরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলেজের পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সালনা বাজার এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে গাজীপুর সদর থানা-পুলিশ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অবরুদ্ধ করে রাখা দুই আওয়ামী লীগ নেতাসহ পাঁচজনকে থানা হেফাজতে নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।

ওই প্রতিষ্ঠানের  দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে আমরা অধ্যক্ষের বিষয়ে অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। প্রতিবাদ করায় আমাকে বহিরাগত ব্যক্তিদের দিয়ে মারধর করেছেন।’

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) আবু তোরাব মো. সামছুর রহমান বলেন, ওই পাঁচজনকে আটক করা হয়নি। তবে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বর্তমানে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিনের মুঠোফোনে একাধিক যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।