শেরপুরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় কঙ্কাল বিক্রি করত চক্রটি

শেরপুর জেলার মানচিত্র

শেরপুরে কঙ্কাল চোরচক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার ও  বুধবার রাতে সদর থানার পুলিশ রাজধানী ঢাকা ও শেরপুরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা চুরি করা কঙ্কাল বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কাছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন বলে পুলিশের কাছে জানিয়েছেন।

এদিকে কঙ্কাল চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত আসামি গোলাম রব্বানী ও বিল্লাল হোসেন কঙ্কাল চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করে বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল মাহমুদের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তাঁরা ওই জবানবন্দি দেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন সদর উপজেলার চান্দেরনগর গ্রামের ভ্যানচালক আবদুর রহিম, নকলা উপজেলার মেদীরপাড় গ্রামের সোহেল রানা, নালিতাবাড়ী উপজেলার রাজনগর গ্রামের গোলাম রব্বানী, বিল্লাল হোসেন, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বালুয়াকান্দি গ্রামের মো. সোহেল রানা ও মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার পশ্চিম রাজদিয়া গ্রামের রাসেল হাওলাদার।  

শেরপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোনালিসা বেগম বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে এসপি মোনালিসা বেগম বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের মির্জাপুর উত্তরপাড়া সামাজিক কবরস্থান থেকে তিনটি কঙ্কাল চুরি হয়। এ ঘটনায় জিহান আহম্মেদ শেখ নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ১৮ সেপ্টেম্বর সদর থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তের সময় পুলিশ কঙ্কাল চোরচক্রের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করে। পরে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খন্দকার সালেহ্ আবু নাঈম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কঙ্কাল পরিবহনের কাজ করা ভ্যানচালক রহিমকে গ্রেপ্তার করেন। এরপর তাঁর দেওয়া তথ্যমতে সোহেল রানা, গোলাম রব্বানী ও বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা জানান, কঙ্কাল চুরির পর সেগুলো ঢাকায় নিয়ে কেমিক্যাল ব্যবসায়ী মো. সোহেল রানা ও রাসেল হাওলাদারের কাছে বিক্রি করা হতো। এরপর বুধবার রাতে রাজধানী ঢাকায় অভিযান চালিয়ে সদর থানার পুলিশ সোহেল রানা ও রাসেল হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে।

এসপি মোনালিসা বেগম আরও জানান, চোরচক্রের সদস্যদের মধ্যে চারজন শেরপুরের বাসিন্দা। তাঁরা মূলত রাত ১২টার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কবরস্থানে গিয়ে কবর খুঁড়ে কঙ্কাল চুরি করতেন। এসব কঙ্কাল বস্তায় ভরে পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রি করতেন তাঁরা। পরে ঢাকায় বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে কঙ্কালগুলো প্রক্রিয়াজাত করে চক্রের সদস্যরা একেকটি কঙ্কাল ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা মূল্যে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কাছে বিক্রি করতেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহম্মেদ আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার কঙ্কাল চোরচক্রের ৬ সদস্যকে ১৭ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার মির্জাপুর উত্তরপাড়া সামাজিক কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জুয়েল, মো. খোরশেদ আলম, মো. সাইদুর রহমান, সদর থানার ওসি বছির আহম্মেদসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।