নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যায় জড়িত ঘাতকেরা চিহ্নিত হলেও তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি আর এই সরকারের কাছে ত্বকী হত্যার বিচার চান না। এই সরকার ত্বকী হত্যার বিচার করতে পারবে না বলে বিশ্বাস তাঁর। ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১২৭ মাস উপলক্ষে আয়োজিত মোম শিখা প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে এসব অভিযোগ করেন রফিউর রাব্বি।
আজ রোববার সন্ধ্যায় নগরের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে মোম প্রজ্বালন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ত্বকী হত্যার পর থেকে ঘাতকদের বিচার শুরু ও ঘাতকদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ ধারাবাহিকভাবে মোম শিখা প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
অনুষ্ঠানে সরকারের সমালোচনা করে রফিউর রাব্বি বলেন, দেশ আজ এমন এক ভয়াবহ পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে বহিঃশক্তি রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একটি স্বাধীন দেশের জন্য এটি অত্যন্ত অমর্যাদাকর। বিচারব্যবস্থা, বাক্স্বাধীনতা, ভোটাধিকার, মানবাধিকার, গণতন্ত্র সবকিছুই আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি আরও বলেন, সাড়ে ১০ বছর পার হলেও, ঘাতক চিহ্নিত হলেও ত্বকী হত্যার বিচার শুরু হয় না। শাসকগোষ্ঠীর ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ১০০ বার সময় নিয়েও সাগর-রুনি হত্যার অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়ে না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে রফিউর রাব্বি আরও বলেন, ‘আমরা আর এই সরকারের কাছে ত্বকী হত্যার বিচার চাই না। যারা সাড়ে ১০ বছরে বিচার করে নাই, দুই-এক মাসে তা তারা করবে না। আগামী নির্বাচনে এমন সরকার আমাদের প্রত্যাশা, যারা বিচারহীনতা থেকে মানুষকে মুক্তি দেবে। মানুষের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার, মানবাধিকার, সংবিধানে উল্লেখিত সব গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেবে। ত্বকীসহ সাগর-রুনি, তনু ও নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চন, বুলু, মিঠুসহ সব হত্যার বিচার করবে।’
সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ত্বকীর বাবা ছাড়াও বক্তব্য দেন শিশু সংগঠক রথীন চক্রবর্তী, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক, বাসদ কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুর সুজন, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি হাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ, সদস্য দীনা তাজরীন ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা।
স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নির্দেশে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে বলেই ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ হয়ে আছে বলে মন্তব্য করেন সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘শামীম ওসমান আপনি যত কারসাজিই করেন ত্বকীকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে আপনাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে। বিচার আপনার হবেই।’
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন ত্বকী। দুদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
২০১৪ সালের ৫ মার্চ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করে। অচিরেই অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করা হবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজও পেশ করা হয়নি।