আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই গ্রেপ্তার করেছেন বাংলাবান্ধার তরুণ সাগরকে

মো. সাগর আলী
ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয়ে নিয়ে যাওয়া মো. সাগর আলীকে (২৫) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছেন বলে জানা গেছে। আজ সোমবার সন্ধ্যায় পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

ওই তরুণের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে বলে তিনি জানান। ইতিমধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তাঁর পরিবারকে জানিয়েছে পুলিশ।

সাগর আলী তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের বাংলাবান্ধা গ্রামের মহসিন আলীর ছেলে। তিনি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকার শ্যামলী কাউন্টারে টিকিট বিক্রির কাজ করতেন। সাগর বিবাহিত এবং তাঁর আট মাস বয়সী একটি ছেলেসন্তান আছে।

আরও পড়ুন

গত শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাবান্ধার শ্যামলী কাউন্টার থেকে সাগর আলীকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান কয়েকজন ব্যক্তি। এ ঘটনায় ওই দিন দিবাগত রাত তিনটার দিকে তাঁর বাবা তেঁতুলিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর সাগর আলীকে কেউ অপহরণ করেছে, নাকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন কোনো কারণে নিয়ে গেছেন, তার খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে পঞ্চগড় জেলা পুলিশ।

গতকাল রোববার পুলিশ, নিখোঁজ তরুণের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাবান্ধার শ্যামলী কাউন্টার থেকে সাগর আলীকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নেন সাত থেকে আটজন ব্যক্তি। এ সময় তাঁরা নিজেদের প্রশাসনের লোক (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর) বলে পরিচয় দেন।

তেঁতুলিয়া থানা-পুলিশ বাংলাবান্ধায় এসে সাগরের বাবাকে ডেকে জানায়, সাগরের বিষয়ে চিন্তার কিছুই নেই। তিনি পুলিশের হেফাজতে এবং ভালো আছেন।

ওই দিন খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, গত শুক্রবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে একটি সাদা মাইক্রোবাস নিয়ে চালকসহ আটজন প্রশাসনের লোক পরিচয়ে বাংলাবান্ধা এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছিলেন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা হোটেল ছেড়ে চলে যান। এ সময় তাঁদের কাছে ওয়াকিটকি ও অস্ত্র ছিল। আবাসিক হোটেলে থাকা ওই লোকেরাই সাগরকে নিয়ে গেছেন বলে ধারণা করেছিলেন তাঁর পরিবার ও স্থানীয় লোকজন। পরে ওই আবাসিক হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে বিষয়টি তদন্ত করে তেঁতুলিয়া মডেল থানা-পুলিশ।

আজ সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে সাগরের ছোট বোন মৌসুমি আক্তার (২৩) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এখন থেকে এক ঘণ্টা আগে তেঁতুলিয়া থানা-পুলিশ বাংলাবান্ধায় এসে তাঁর বাবাকে ডেকে জানায়, সাগরের বিষয়ে চিন্তার কিছুই নেই। তিনি পুলিশের হেফাজতে এবং ভালো আছেন। মৌসুমি আক্তার বলেন, ‘তবে আমার ভাই কোথায় আছে, কীভাবে আছে, তা আমাদের জানানো হয়নি।’

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাগর নামের ওই তরুণকে ঢাকা থেকে আসা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দল গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। তিনি একটি বিগ ক্রাইমের সঙ্গে জড়িত। ইতিমধ্যে তাঁকে ঢাকায় আদালতে সোপর্দও করা হয়েছে। তবে তাঁর বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ছাড়া তাঁর যাবতীয় হিউম্যান রাইটস (মানবাধিকার) তিনি পাবেন।’