ভরা মৌসুমেও সবজির দাম চড়া

বাজারগুলোতে প্রচুর শাকসবজি দৃশ্যমান। উৎপাদনও ভালো। দাম বেশি থাকার কারণে প্রয়োজনমতো সবজি কিনতে পারছেন না ক্রেতারা।

মুন্সিগঞ্জের প্রতিটি হাটবাজারে, সড়কের পাশের ভ্যানে, ছোট দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে শীতকালীন সবজি। প্রায় সব ধরনের সবজি কিনতে গত বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ দাম গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বিক্রেতারা বলছেন, সবজির ঘাটতি আছে। কৃষকদের থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাঁদের। আর কৃষি বিভাগ বলছে, মাঠে-বাজারে কোথাও সবজির ঘাটতি নেই।

গত শনি ও গতকাল রোববার মুন্সিগঞ্জ বড় বাজার, মুক্তারপুর, রিকাবিবাজারসহ মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরে সব জায়গায় বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির পসরা দেখা যায়। এসব বাজারে প্রতিটি ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৪৫ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০-৫০ টাকা, লাউ ৮০-৯০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে শিম, ২৫ টাকায় মুলা, নতুন আলু ৪৫-৫০ টাকায়, ৬০ টাকা কেজিতে ধনেপাতা, ৫৫-৬০ কেজি দরে টমেটো, ৭০ টাকায় বেগুন, ৫০ টাকা দরে ক্ষীরা, ৮০ টাকায় বরবটি, ৪০ টাকা কেজি দরে লালশাক বিক্রি হচ্ছে।

এবার মৌসুমের শুরুতে দুই বার ভারী বৃষ্টির জন্য ফসলের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। সবজি আবাদেও কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে গতবার এ সময়ে সবজির যেমন উৎপাদন ছিল, এ বছরও তেমনই রয়েছে।
আবদুল আজিজ, মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক

ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর এই সময়ে খুচরা বাজারে শীতকালীন সবজির দাম ছিল বেশ কম। ফুলকপি, বাঁধাকপি ২৫-৩০ টাকায়, মিষ্টিকুমড়া ৩০ টাকা, লাউ ৪৫-৫০ টাকায়, গাজর ৩০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, শিম ৩০ টাকা, আলু ২৫-৩০ টাকা, ধনেপাতা ২০ টাকা, টমেটো ২৫-৩০ টাকা, বেগুন ৩০-৩৫, ক্ষীরা ২৫ টাকায় কেনা গেছে।

সবজির চড়া দামের বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জ বড় বাজারের ব্যবসায়ী মিরাজ হোসেন বলেন, বাজারগুলোতে প্রচুর শাকসবজি দৃশ্যমান। তবে কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন গত বছরের তুলনায় কমে গেছে। উৎপাদন খরচ ও বেশি। পাইকারিভাবে বেশি দামে কেনায় খুচরা বাজারেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কম দামে কিনতে পারলে, কম দামে বিক্রি করা যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর। চাষাবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৯০৭ হেক্টর জমিতে। এসব জমি থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৫ টন সবজি। এর মধ্যে ১ হাজার ১৭৬ হেক্টর জমি থেকে ১৪ হাজার ১১২ টন সবজি উত্তোলন করা হয়েছে। সবজির উৎপাদন ভালো। চলতি বছর সবজি উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, তার থেকে বেশি হবে বলে জেলা কৃষি কার্যালয়-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা।

মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে দুই বার ভারী বৃষ্টির জন্য ফসলের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। সবজি আবাদেও কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে গতবার এ সময়ে সবজির যেমন উৎপাদন ছিল, এ বছরও তেমনই রয়েছে। মাঠে-বাজারে কোথাও সবজির ঘাটতি নেই। এরপরও গতবারের তুলনায় দাম অনেক বেশি। বিষয়টি যাঁরা বাজার দেখাশোনা করেন, তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন।

বিষয়টি নজরে আনা হলে মুন্সিগঞ্জ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং মাঠ ও বাজার পরিদর্শক এ বি এম মিজামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সবজির উৎপাদন খরচ গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের কৃষকদের সবজি নষ্ট হয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরাও বেশি লাভ করছেন। তাই গত বছরের তুলনায় এবার সবজির দাম বাজারে বেশি।

মুন্সিগঞ্জ সদরের মোল্লাপাড়া এলাকার কৃষক ময়নাল হক। তিনি এবার ছয় একর জমিতে টমেটো, বেগুন, শিম ও আলুর চাষাবাদ করেছেন। সবজির উৎপাদন ও দামের বিষয়ে জানতে চাইলে এই কৃষক মুচকি হেসে বলেন, দাম ও উৎপাদন দুটিই ভালো। তবে মৌসুমের শুরুর দিকে বৃষ্টিতে দুই বার তাঁরসহ অনেক কৃষকের ফলন নষ্ট হয়েছে। সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে উৎপাদিত সবজি একটু বেশি দামে বিক্রি করছেন তাঁরা। তবে বাজারে ব্যবসায়ীরা যে দামে বিক্রি করছেন, সেটা কৃষকদের দামের থেকে কেজিতে ১০-২০ টাকা বেশি বলে দাবি ময়নালের।

মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট এলাকার ভ্যানগাড়ি থেকে শীতকালীন সবজি কেনেন আসমা বেগম। সবজি কেনা শেষে তিনি বলেন, ‘আমরা মধ্যবিত্তরা একমাত্র বছরের এ মৌসুমেই ব্যাগ ভরে সবজি কিনি। পেট ভরে সবজি খাই। এবার সবজির যে দাম, তাতে প্রয়োজনমতো কিনতে পারছি না।’