পঞ্চগড়ে জমি দখল ও মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ

জমি দখল ও মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে মানববন্ধন ও অবরোধ। শনিবার পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী বাজারেছবি: প্রথম আলো

পঞ্চগড়ের বোদায় জমি দখল ও চুরির মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন এবং মহাসড়ক অবরোধ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ময়দানদিঘী বাজারে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় ব্যক্তিদের ব্যানারে মানববন্ধন শুরু হয়। একপর্যায়ে বেলা সোয়া ১১টার দিকে মানববন্ধনকারীরা মহাসড়কের মধ্যে বসে অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেন।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বোদা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম ফুয়াদ পুলিশসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধকারীরা বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের জমুকড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা। এ সময় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য আনসারুল ইসলাম, পারুল বেগম, শাপলা আক্তার, আর্ণিকা বেগম, শাহজাহান আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন। বেলা সোয়া ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত এ মহাসড়ক অবরোধে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের দুই পাশে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ময়দানদিঘী ইউনিয়নের জমকুড়াপাড়া এলাকার আনসারুল ইসলামের পরিবার ও তাঁদের পূর্বপুরুষেরা প্রায় ৭৫ বছর ধরে ক্রয়সূত্রে ২৪ বিঘা জমি ভোগ দখল করে আসছেন। কয়েক বছর আগে স্থানীয় আনিসুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা ওই জমি নিজেদের দাবি করে গাজীপুরের তোফায়েল আহাম্মেদ নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। পরে এ নিয়ে আদালতে মামলা হয়। ৪ জুন তোফায়েল আহাম্মেদ লোকজন নিয়ে বোদা থানা-পুলিশের উপস্থিতিতে জমি দখল করেন ও কাঁটাতারের বেড়া দেন। এরপর রাতের আঁধারে কে বা কারা জমিতে দেওয়া বেড়া ভেঙে দিলে এর দায় চাপানো হয় ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ওপর। এ নিয়ে তোফায়েল আহাম্মেদ ২০ জুন বোদা থানায় মামলা করেন। মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করা হয়। এতে কলেজশিক্ষার্থী ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নামও দেওয়া হয়। মামলার পর থেকেই পুলিশ মামলার আসামি ধরতে হয়রানি করছে। কোনো ঘটনা ছাড়াই এমন মামলা, হয়রানি ও পুলিশের উপস্থিতিতে জমি দখলের ঘটনায় বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হকের বিচার দাবি করেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা।

তোফায়েল আহাম্মেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার রায় ও ডিক্রি পাওয়া মালিকের কাছ থেকেই আমি কিনেছি। আমার কাছে জমির ঝকঝকে কাগজ আছে। সেখানে বেড়া দিয়ে ঘর তুলেছি। এতে পুলিশের কোনো প্রকার সহায়তা নিইনি। সেখানে আবাদ করার প্রস্তুতি চলছিল। আমার জমিতে ১৫ জুন রাত দুইটার দিকে বেড়া, ঘর ভেঙে নিয়ে গেছে। এমনকি আমার দেখাশোনা করা কেয়ারটেকারকে মারধর করে মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়েছে। আমি কোনো মিথ্যা মামলা করিনি। যা ঘটনা ঘটেছে, তা-ই মামলায় উল্লেখ করেছি। আমি সত্যের পথে আছি, সত্যের জয় হবেই।’

বোদা থানার ওসি মোজাম্মেল হক বলেন, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। ওই জমি নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন মামলা চলছিল। পরে একটি পক্ষ মামলার রায় পেয়েছে। রায় ও ডিক্রি পাওয়া মালিকের কাছে তোফায়েল আহাম্মেদ নামের এক ব্যক্তি ২০১৭ সালে জমি কিনেছেন, সেটা তিনি ৪ জুন দখলে নিয়ে বেড়া দিয়েছিলেন। তবে সেখানে পুলিশের কোনো সহায়তা ছিল না। পরে ১৫ জুন তাঁর জমিতে দেওয়া বেড়া ও টিনের চালা ঘর ভেঙে দিয়ে কেয়ারটেকারকে মারধর করে কিছু লোক মালামাল নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় তোফায়েল আহাম্মেদ থানায় মামলা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করা হবে না।