‘চাল–চুলো কিচ্ছুনি, মানুষের ঘরের বারান্দায় থাকতিছি’

টর্নেডোর আঘাতে রহিমা বেগমের ঘরের চালের একাংশ উড়ে গেছে।শুক্রবার সকালে শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের কালিঞ্চি কলোনিপাড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ও কৈখালী ইউনিয়নে টর্নেডোর আঘাতে চার শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো পড়েছে চরম দুর্ভোগে। আজ শুক্রবার সকালে কালিঞ্চি কলোনিপাড়ায় গিয়ে দুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়।

সেখানে কান্নারত অবস্থায় ষাটোর্ধ্ব বিধবা রহিমা বেগম বলেন, ‘চাল–চুলো কিচ্ছুনি, মানুষের ঘরের বারান্দায় থাকতিছি, আর তাগো দেয়া ভাত খেয়ে রোজা রাখিছি।’ রহিমা আরও বলেন, এক ছেলে বাঘের আক্রমণে মারা যাওয়ার পর সম্প্রতি অপর ছেলে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। মানুষের সাহায্য নিয়ে একটি ঘর তুলেছিলেন। সেই ঘর টর্নেডোর তাণ্ডবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

কালিঞ্চি মধ্যপাড়া গ্রামের রেজাউল ইসলামের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, পাঁচজনের সংসারে চারজনই রোজা রেখেছেন। খাবার কিছু না থাকায় ভিজে যাওয়া সামান্য চাল অন্যের বাড়ি থেকে রান্না করে দুই সন্তানকে খেতে দিয়েছেন। আর তিনি ও স্বামী শুধু একমুঠো ভেজা চাল ও পানি খেয়ে রোজা করছেন। তিন সন্তানকে প্রতিবেশীর বাড়ির বারান্দায় রেখে নিজেরা পলিথিন মুড়িয়ে বিধ্বস্ত ভিটায় রাত কাটিয়েছেন।

শুধু কলোনিপড়ার রহিমা বেগম কিংবা মধ্যপাড়ার জাহানারা বেগম নন। সুন্দরবন–সংলগ্ন গেটপাড়া, পশ্চিম কৈখালী ও বৈশখালী এলাকার বাসিন্দাদের অবস্থা একই রকম। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে টর্নেডোর তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়েছে চার শতাধিক ঘরবাড়ি। ফলে শতাধিক পরিবার খোলা আকাশের নিচে কঠিন সময় পার করছে।
পূর্ব কৈখালী গ্রামের সাহেদ আলী বলেন, অনেক কষ্ট করে ছাউনি দিয়ে একটা বসতঘর বেঁধেছিলেন। টর্নেডোর আঘাতে মুহূর্তের মধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে উঠেছেন অন্যের বাড়িতে। আজ শুক্রবার প্রথম রোজা। সাহ্‌রিও করতে পারেননি। শেষ রাতে শুকনা খাবার, চিড়া ও মুড়ি খেয়ে রোজা রেখেছেন। গতকাল দুপুর থেকে বাড়িতে চুলা জ্বলেনি।

টর্নেডোর তাণ্ডবে বসতঘরের ছাউনি উড়ে গেছে বলে জানালেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সব ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে পানি-কাদার মধ্যে রাত যাপন করেছেন। রাতে এক প্রকার না খেয়েই রোজা রয়েছেন।

রমজাননগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ আল মামুন বলেন, টর্নেডোর আঘাতে শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ৩০টি পরিবার খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছে। আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত তাঁদের কাছে কোনো সহযোগিতা পৌঁছায়নি।
টর্নেডো আঘাত হানার পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪৫০ কেজি চাল ছাড়াও চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট বিতরণ করেছেন বলে জানিয়েছেন কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহিম। তিনি বলেন, নিখোঁজ জেলে রুহুল গাজীর সন্ধানে ব্যস্ত থাকায় দুপুর পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা সম্পন্ন করা যায়নি।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত দুটি ইউনিয়নের জন্য এক হাজার কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। তালিকা পেলে তাঁদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হবে।