জাকসু নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ
যুদ্ধের ময়দানে এসে তিনি লেজ গুটিয়ে পালিয়েছেন: শিবিরের এজিএস প্রার্থী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের এজিএস (পুরুষ) প্রার্থী ফেরদৌস আল হাসান। পদত্যাগকারী কমিশনারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের ময়দানে এসে তিনি লেজ গুটিয়ে পালিয়েছেন। তাঁর এই পদত্যাগ আমাদের কাছে মনে হয়, নির্বাচনকে ঘিরে তাঁর যে হীন ষড়যন্ত্র ছিল, সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে না পেরে তিনি পদত্যাগ করেছেন।’
আজ শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ফেরদৌস আল হাসান।
প্রসঙ্গত এর আগে আজ রাত পৌনে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের নিচে সংবাদ সম্মেলন করে জাকসু নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগের ঘোষণা দেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন এবং শিক্ষকদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাবেক সহসভাপতি।
এরপর সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের ব্রিফিংয়ে এজিএস (পুরুষ) প্রার্থী ফেরদৌস আল হাসান বলেন, ‘জাকসুকে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। এটি খুবই প্রহসনমূলক আচরণ। তিনি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা। তিনি কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করার কমিটিতে থাকেন। তিনি যে অভিযোগগুলো করে পদত্যাগ করেছেন, সেগুলো ভিত্তিহীন।’
ফেরদৌস আল হাসান বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) ১১ সেপ্টেম্বর আমরা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিয়েছি। আমরা দেখেছি, নির্বাচনী ব্যবস্থার কিছু ত্রুটি ছিল, তারপরও শিক্ষার্থীরা ভোটকেন্দ্রে এসেছে। শতকরা ৬৮ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছে, তারা জাকসু চায়, অধিকার বাস্তবায়ন করতে চায়।’
এই নির্বাচন বানচালের প্রচেষ্টা টিকবে না উল্লেখ করে এজিএস প্রার্থী আরও বলেন, ‘একটি নির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওএমআর পদ্ধতিতে ভোট গণনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে নির্বাচন কমিশন। সে ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে বা অন্য কোনো অংশীজনের সঙ্গে আলাপ করা হয়নি।’
ফেরদৌস আল হাসান বলেন, ম্যানুয়ালি ভোট গণনার ক্ষেত্রে জাকসু নির্বাচন কমিশনের তেমন কোনো প্রস্তুতি ছিল না। ভোট গ্রহণ শেষে প্রায় ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হল সংসদের ভোট গণনা শেষ করতে পেরেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংসদের সব ভোট গণনা বাকি। সেই দায়টা পদত্যাগকারী নির্বাচন কমিশনের সদস্যকে নিতে হবে। এ দায় থেকে তিনি মুক্তি পেতে পারেন না।
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে ২১টি হল সংসদের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। তাঁদের মধ্যে ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮ এবং ছাত্র ৬ হাজার ১৫ জন। নির্বাচনে ভোট পড়েছে প্রায় ৬৮ শতাংশ।
জাকসু কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৭ প্রার্থী। সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জাকসুতে এবার পূর্ণ ও আংশিকসহ আটটি প্যানেল হয়েছিল। এর মধ্যে ছাত্রদলের প্যানেল, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতির ঐক্য, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের সংশপ্তক পর্ষদ (২৫ পদে ৫ প্রার্থী), স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ (৮ প্রার্থী) এবং ছাত্র ফ্রন্টের একাংশের একটি প্যানেল (৩ প্রার্থী) ভোট বর্জন করেছেন। কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও ভোট বর্জন করেছেন।