বড় বড় ব্যানারে মানিকগঞ্জে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের প্রধান ভবনের প্রায় পুরোটাই ঢেকে গেছে। এসব ব্যানারের কারণে ভবনের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালও দৃষ্টিগোচর হয় না। এ ছাড়া জেলা শহরের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে বেউথা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার চার লেনের সড়কের প্রতিটি সড়কবাতির খুঁটিতে লাগানো হয়েছে বড় বড় ফেস্টুন। একই অবস্থা জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা ও অলিগলিতেও।
ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডের প্রায় সবই সরকারি দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের। এসব কারণে শহরের যেমন সৌন্দর্যহানি হচ্ছে, তেমনি রাতের বেলায় সড়কে আলোকস্বল্পতাও দেখা দিয়েছে। ফলে তৈরি হচ্ছে দুর্ঘটনার শঙ্কা। অথচ এসব অপসারণে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। এ নিয়ে পৌরবাসীদের ক্ষোভ থাকলেও তাঁরা কিছু বলতে পারছেন না।
এর আগেও এসব অপসারণ করা হয়েছিল। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নির্দেশনা রয়েছে। দ্রুতই আবারও এসব অপসারণ করা হবে।
মানিকগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড-বেউথা সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হয় প্রায় দুই বছর আগে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের অনেক যানবাহন ও যাত্রী এই সড়ক ব্যবহার করে থাকেন। সড়ক বিভাজকে শতাধিক সড়কবাতির খুঁটি স্থাপন করা ও সৌন্দর্যবর্ধক বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানো হয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত এসব সড়কবাতি সড়ক আলোকিত করে রাখে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌর এলাকায় বৈদ্যুতিক ও আলোকসজ্জার দায়িত্বে থাকা এক কর্মচারী বলেন, জিআই তার দিয়ে ফেস্টুনগুলো লাগানোর কারণে প্রায়ই খুঁটিতে থাকা সড়কবাতির সংযোগ তার ছিঁড়ে যায়। এতে সড়কবাতি জ্বলে না। তা ছাড়া অতিরিক্ত ফেস্টুনের কারণে সড়কে আলোকস্বল্পতাও দেখা দিয়েছে। নিষেধ করা সত্ত্বেও এসব বিলবোর্ড লাগানো থেমে নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জের বাসস্ট্যান্ড থেকে বেউথা তিন রাস্তার মোড় পর্যন্ত প্রতিটি সড়কবাতির খুঁটিতে ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। কোনো কোনো খুঁটিতে পাঁচ থেকে ছয়টিও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। এসব ফেস্টুনের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের। তাঁরা শুভেচ্ছা জানিয়ে এসব ফেস্টুন লাগিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও কিছু ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সংলগ্ন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সীমানাপ্রাচীর, সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠের সীমানাপ্রাচীর, জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণসহ জেলা শহরের প্রতিটি বৈদুতিক খুঁটিও ব্যানার, বিলবোর্ড ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে।
শহরে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকচালক খোরশেদ আলম বলেন, রাস্তায় ফেস্টুন ও বিলবোর্ডের আড়ালের কারণে এক লেন থেকে আরেক লেনে যাওয়ার সময় যানবাহন দেখা যায় না। সম্প্রতি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এক লেন থেকে আরেক লেনে যাওয়ার সময় দুই ইজিবাইকের সংঘর্ষে কয়েকজন যাত্রী আহত হন।
যত্রতত্র বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও ব্যানারে শহরের সৌন্দর্য নষ্টের বিষয়টি স্বীকার করে পৌর মেয়র রমজান আলী বলেন, এর আগেও এসব অপসারণ করা হয়েছিল। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নির্দেশনা রয়েছে। দ্রুতই আবারও এসব অপসারণ করা হবে।
এদিকে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের প্রধান ভবনে জেলা ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বড় বড় ব্যানার সাঁটানো দেখা গেছে। শুভেচ্ছা জানিয়ে ছাত্রলীগের জেলা ও কলেজ শাখার নেতা-কর্মীরা এসব ব্যানার লাগিয়েছেন। কলেজ প্রাঙ্গণে কথা হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তাঁরা জানান, কলেজ ক্যাম্পাসে যত্রতত্র ব্যানার ও বিলবোর্ড সাঁটিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগের নেতাদের ব্যানারের কারণে কলেজ প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটিও দৃষ্টিগোচর হয় না। কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, এরই মধ্যে কলেজ ক্যাম্পাসের কয়েকটি স্থান থেকে ব্যানার-ফেস্টুন সরানো হয়েছে। কলেজের সামনের ভবনের ব্যানারগুলোও অপসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
অহেতুক ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডের কারণে শহরের সৌন্দর্য ম্নান হয়ে পড়েছে দাবি করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মানিকগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের দাবি, বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন অপসারণ করে সৌন্দর্য রক্ষা করা হোক।’