রংপুরে শেখ হাসিনা সেতুর কার্পেটিংয়ে ফাটল, আতঙ্ক

তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত শেখ হাসিনা সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ায় লোকজন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। ছবিটি আজ শনিবার সকালে তোলাছবি: প্রথম আলো

তিস্তা নদীর ওপরে রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরে স্থাপিত শেখ হাসিনা সেতুর কার্পেটিংয়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেতুর সংযোগ সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে ধসে গেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে সেতুতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঝুঁকি ও আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করছে পথচারী ও যানবাহন। সেতুটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ১২৪ কোটি টাকা।

আজ শনিবার সকাল ৮টায় সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর উত্তর প্রান্তে ৩ নম্বর পিলারের কাছের স্ল্যাবে প্রায় ১৫ ফুট জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। কার্পেটিংয়ের সঙ্গে স্প্যানের ঢালাইয়ের কিছু অংশ উঠে গেছে। সেখানে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে। জায়গাটি কলাগাছ ও অন্যান্য গাছের ডালপালা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ৩ নম্বর থেকে ৪ নম্বর পিলার পর্যন্ত সেতুর কার্পেটিং উঠে চার জায়গায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সেতুর দুই দিকের সংযোগ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে ধসে গেছে।

পায়ে হেঁটে সেতু পার হওয়ার সময় কথা হয় মাছুয়াপাড়া গ্রামের চেন বানুর সঙ্গে। ফাটল ধরা অংশ দেখিয়ে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘পাথরের গাড়ির জন্যে হামরা ব্রিজখান দিয়া হাঁটি যাবার পারি না। পাথরের গাড়ি যখন যায়, পুরা ব্রিজ ঢোলে। আজ দেখোছি বিজ্রকোনার মাঝোত ফাটি গেইছে। ব্রিজকোনা ভাঙি গেইলে হামার দুর্গতি হইবে।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এরপর ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর উদ্বোধন করেন। পরে এটির নামকরণ করা হয় শেখ হাসিনা সেতু। সেতুটি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর এলাকার সঙ্গে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারি ইউনিয়নের মহিপুর এলাকাকে সড়কপথে যুক্ত করেছে। ১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের সেতুতে রয়েছে ১৬টি পিলার, ১৭টি স্প্যান, ৮৫টি গার্ডার।

উদ্বোধন করা হলেও সেতুর উত্তর প্রান্তে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর এলাকায় সংযোগ সড়কের মধ্যে লোহার পাইপ দিয়ে তৈরি একটি প্রতিবন্ধক দেওয়া হয়। এর ফলে বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকে। সাড়ে তিন বছর পর ওই প্রতিবন্ধক খুলে দেওয়া হলে ২০২১ সালের ৭ অক্টোরব রংপুর-লালমনিরহাট-পাটগ্রাম সড়কে ওই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু করে। এতে লালমনিরহাটের সঙ্গে রংপুরের যোগযোগে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে আসে।

সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে দাঁড়িয়ে কথা হয় মহিপুর গ্রামের যুবক সজল আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মহিপুর শেখ হাসিনা সেতু শুধু পারাপারে নয়, মানুষজন পরিবার নিয়ে ঘুরতেও আসে। এই সেতু ১০০ বছরেও কিছু হওয়ার কথা নয়। অথচ ছয় বছর যেতে না যেতেই ফাটল দেখা দিয়েছে। বালুবাহী ডামট্রাক, পাথরের ট্রাক ওভারলোড নিয়ে চলাচল করায় সেতুর আজ এ অবস্থা হয়েছে।’

রংপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান আলী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর স্প্যান জয়েন্টে পানি ঢুকে সেতুর ডেক স্ল্যাবের ওপর যে কার্পেটিং ওয়ারিং করা হয়েছে, তা ফেটে গেছে। মূল সেতুর কোনো সমস্যা হয়নি। বিষয়টি বৃহস্পতিবার এলজিইডির সদর দপ্তরে জানানো হয়েছে। দুই–এক দিনের মধ্যে বিশেষজ্ঞ দল আসবে। তাদের সিদ্ধান্তে সমস্যা সমধান করা হবে।