‘মাছ খাওয়া ভুলে গেছি, ডাল–শাক দিয়া কোনোমতে ভাত গিলি’

চা বিক্রি করে রফিকের সংসার চলে
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র আলীপুরের মোড়। জায়গাটির বর্তমান নাম ইমাম উদ্দিন স্কয়ার। এই মোড়ে ১১তলা একটি ভবনের পাশে টিনের ছাপরার খুপরি দোকানে চা বিক্রি করেন রফিক তালুকদার ওরফে মনা (৫৬)। এই দোকানের আয়েই রফিকের ছয় সদস্যের সংসার চলে।

স্ত্রী, চার মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে রফিকের পরিবার। এর মধ্যে বড় মেয়ে মৌসুমির বিয়ে হয়ে গেছে। অন্য তিন মেয়ে আশা (২৫), সুমিতা (১৮) ও সুচিতাকে (১৭) এবং ছেলে রনিকে (২৩) নিয়ে রফিক ও তাঁর স্ত্রী শাহীনূর (৪২) থাকেন কুমার নদের পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমির ওপর একটি ছাপরা ঘরে। তাঁদের নিজস্ব কোনো জমি নেই।

রফিক আগে রিকশা চালাতেন। পরে রিকশাটি চুরি হয়ে যাওয়ায় এখন তিনি চা বিক্রি করেন। ছেলে রনিকে নিয়ে দোকানটি চালান রফিক। তবে স্ত্রী শাহীনূর ও ছোট মেয়ে সুচিতা চা বিক্রির কাজে তাঁকে সাহায্য করে। দোকানের সব খরচ মেটানোর পর দিন শেষে রফিকের আয় হয় গড়ে ৫০০ টাকা। সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়ার পর থেকে সংসারের খরচের হিসাব মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন রফিক।

রফিক বলেন, ‘মাছ খাওয়া ভুলে গেছি। আগে সপ্তাহে একবার মাছ কিংবা গরুর গোশত কিনতে পারতাম। এখন ডাল-শাক দিয়া কোনোমতে ভাত গিলি। সপ্তাহে অন্তত একদিন ব্রয়লার মুরগি কিনে খাই। আগে খেতাম গরুর গোশত। এখন গরুর গোশতের দাম বাইড়া ৭০০ টাকা হইছে। এ জন্য গরুর গোশত আর খাওয়া হয় না।’

অন্য জিনিসপত্রের মতো চা-পাতা ও চিনির দাম বেড়েছে। পাশাপাশি জ্বালানির দামও ঊর্ধ্বমুখী। তবে এর বিপরীতে চায়ের দাম বাড়াতে পারছেন না রফিক। এখনো প্রতি কাপ রং–চা ৫ টাকা দরে বিক্রি করেন তিনি। রফিক বলেন, ‘অনেকে দাম বাড়িয়ে ৭ টাকা করতে বলেন। কিন্তু ফুটপাতের এই দোকানে চায়ের দাম ৭ টাকা করলে খদ্দের কমে যাবে। সব জিনিসের দাম বাইড়া গেছে। চায়ের কেজি ৫২০ টাকা। আগে চিনি ৩০-৪০ টাকা দরে। এখন কিনতে হয় ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দিয়ে। খড়ির উনুনে চা বানাই। খড়ি আগে কিনতে হতো ১১০ থেকে ১২০ টাকা মণ। এখন ৩০০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না।’

দাম বাড়ার এই ধারা অব্যাহত থাকলে সামনে কীভাবে সংসার চালাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন রফিক। তিনি বলেন, ‘যেভাবে দাম বাড়ছে, তাতে জান বাঁচানো কষ্ট। সবকিছুর দাম অতিরিক্ত। দিনে দিনে আরও বাড়ছে, কমার তো কোনো লক্ষণ নাই। সামনে রোজা। তখন তো আরও দাম বাড়বে। অভাবের সংসার একবেলা খাইলে আরেক বেলা উপোস করে থাকতে হয়। বউ-ছেলেমেয়েরাও খিদার কষ্টের কথা বলে। সবাই রোগা-পাতলা, পুষ্টির অভাব। জান বাঁচানো যেখানে কষ্ট, সেখানে ছোয়াইল-মাইয়াদের পুষ্টির কথা কীভাবে ভাবব!’