আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ব্যারিস্টার আমীর ও তাঁর মেয়ে তানিয়া

ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও তাঁর মেয়ে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর
ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে বিশিষ্ট আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম ও তাঁর মেয়ে তানিয়া আমীর কুষ্টিয়ার দুটি আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তাঁদের পক্ষে একজন প্রতিনিধি গতকাল রোববার দুপুরে দলের প্রধান কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। তবে তাঁদের মনোনয়ন ফরম কেনার সমালোচনা করেছেন দলের স্থানীয় নেতারা।

মনোনয়ন ফরম বিক্রির খুলনা বিভাগের জন্য গঠিত কমিটির সদস্য ও কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. হাসান মেহেদী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রোববার দুপুরে একজন আইনজীবী এসে দুটি আসনের জন্য ফরম কিনেছেন। ব্যারিস্টার আমীর–উল ইসলাম কুষ্টিয়া-৩ (সদর) ও তাঁর মেয়ে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

আমীর-উল ইসলাম স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের রচয়িতা এবং সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য। তিনি যে আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, সেই কুষ্টিয়া-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। আর কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সেলিম আলতাফ।

এ বিষয়ে জানতে আমীর-উল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর মেয়ে তানিয়া আমীর বলেন, তাঁরা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার জানানো হবে।

এদিকে আইনজীবী বাবা ও মেয়ের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনায় জেলাজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাযহারুল আলম বলেন, জেলায় দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে তাঁদের সম্পৃক্ততা নেই। কেন্দ্রেও তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। হঠাৎ কেন তাঁরা মনোনয়ন ফরম কিনলেন, সেই জবাব তাঁরাই ভালো দিতে পারবেন।

মাযহারুল আলম আরও বলেন, ‘আমরা বিস্মিত। এর চেয়ে ভালো শব্দ নেই। কুষ্টিয়া সদর আসনে আমরা সবাই মাহবুব উল আলম হানিফকে একক প্রার্থী হিসেবে চাই।’

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমীর-উল ইসলাম যোগাযোগ করেছিলেন। বলেছিলাম এখানে হানিফ সাহেব আছেন। তিনি হেভিওয়েট প্রার্থী। এ ছাড়া তানিয়া আমীরও গতকাল (রোববার) ফোন করেছিলেন। কিছু কথা হয়। কুষ্টিয়া-৪ আসনের বিষয়ে কিছু বলে দিয়েছি। আর তাঁরা কেন ফরম কিনলেন, সেটা জানি না।’

কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান বলেন, ‘আমরা খুবই আশ্চর্য হয়েছি। কুষ্টিয়া-৪ আসনে মনোনয়ন চাওয়ায় মনে হচ্ছে, তাঁরা খেয়ালখুশি মতো চেয়েছেন। কারণ, তাঁদের এই আসনে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাঁরা যদি মনোনয়ন পান, তবে কর্মীরা খুবই হতাশ হবেন।’

স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমীর-উল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের সময় নানা অবদান রেখেছেন। তবে ২০০৭ সালের পর কয়েক বছর ধরে জেলার রাজনীতির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। সভা-সমাবেশে এমনকি রাজপথেও তাঁকে দেখা যায়নি। তাঁর মেয়েকেও কোনো সভা-সমাবেশে দেখা মেলেনি। তাঁরা ঢাকাতেই থাকেন। কুষ্টিয়া শহরের বাড়িতে মাঝেমধ্যে আমীর-উল ইসলাম যাতায়াত করেন।

আমীর-উল ইসলাম ও তাঁর মেয়ে তানিয়া আমীরের মনোনয়ন ফরম কেনার বিষয়ে কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ বলেন, যে কারও ফরম কেনার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। দলের প্রধান ও বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় বলে আসছেন, তৃণমূল বা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে। তাঁর ওপর দলের সব নেতা-কর্মীর আস্থা আছে।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। দলের সভানেত্রী সব খোঁজ-খবর রাখেন। তাঁর কাছে সব বিষয়ে এলাকার সব রকম তথ্য আছে। তিনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা তাঁর বিষয়।