কম দামে ইট দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে ‘উধাও’ ইউপি চেয়ারম্যান

নওগাঁ সদর উপজেলার ইলশাবাড়ি এলাকায় সুরমা ব্রিকস ইটভাটায় পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে ভুক্তভোগীদের মানববন্ধনছবি: প্রথম আলো

নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর এলাকায় কম দামে ইট দেওয়ার কথা বলে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে অগ্রিম প্রায় পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ইটভাটার মালিক ছবেদুল ইসলাম ওরফে রনির বিচারসহ পাওনা টাকা ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার কাঠালতলী-রানীনগর সড়কের ইলশাবাড়ি সেতুসংলগ্ন সুরমা ব্রিকস নামের ইটভাটার খলায় এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। ‘ভুক্তভোগী জনসাধারণ’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ইলশাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সাইদুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন চণ্ডীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বেদারুল ইসলাম, চণ্ডীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আলতাফ হোসেন, সদর উপজেলার মাদারমোল্লা খিদিরপুর গ্রামের মিজানুর রহমান, ইলশাবাড়ি গ্রামের মোশাররফ হোসেন, বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার তারাপুর গ্রামের তপেস কুমার প্রমুখ।

ইটভাটার মালিক ছবেদুল ইসলাম নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার পাটিচরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান। সুরমা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটি সোসাইটি লিমিটেড নামে তাঁর একটি সমবায় সমিতি রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার ছবেদুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা বলছেন, বছরের কিছু সময় ইটের দাম বেড়ে যায়। অন্য সময় কম দামে ইট পাওয়া যায়। ভাটা কর্তৃপক্ষকে অগ্রিম টাকা দিলে প্রতি হাজার ইটে দুই-তিন হাজার টাকা কম পড়ে। ছবেদুল ইসলামের ইলশাবাড়ি এলাকায় সুরমা ব্রিকস-১ ও সুরমা ব্রিকস-২ নামের দুটি ইটভাটা রয়েছে। ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালের বিভিন্ন সময় কম দামে ইট পাওয়ার চুক্তিতে তাঁকে টাকা দেন অনেক মানুষ। টাকা লেনদেনের রসিদ তাঁদের কাছে রয়েছে। কিন্তু নানা অজুহাতে নির্ধারিত সময়েও ইট দেওয়া হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ইট না পাওয়ায় অগ্রিম দেওয়া টাকা ফেরত চেয়ে বারবার ধরনা দেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা। কিন্তু তিনি ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের টাকা ফেরত দেননি। এতে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসেছেন।

এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে গতকাল বুধবার জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা। তাঁদের একজন ইলশাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, তিনি ৫৫ হাজার ৬০০ ইট কেনার জন্য ছবেদুল ইসলামকে পাঁচ লাখ চার হাজার টাকা অগ্রিম দেন। গত বছরের ১ অক্টোবর এই টাকা দেন তিনি। চুক্তি অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে সব ইট দেওয়ার কথা। বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও একটি ইটও পাননি তিনি। দুই মাস ধরে ভাটামালিক, ব্যবস্থাপকসহ সবাই উধাও। ভাটার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ। তাঁর মতো অগ্রিম টাকা দেওয়া অন্য পাওনাদারেরা ভাটায় এসে মালিক কর্তৃপক্ষের কাউকে পাচ্ছেন না। মালিক ও ব্যবস্থাপকের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

আদমদিঘী উপজেলার তারাপুর গ্রামের বাসিন্দা তপেস কুমার বলেন, কম দামে দেড় লাখ ইট কেনার জন্য তিন বছর আগে সুরমা ব্রিকস ইটভাটার মালিক ছবেদুল ইসলামকে সাত লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে সব ইট দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ইট পাননি তিনি। বারবার ধরনা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। ছবেদুল ইসলামকে অগ্রিম টাকা দিয়ে এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। নওগাঁ সদর, রানীনগর ও আদমদিঘী উপজেলার অর্ধশতাধিক মানুষ এভাবে অগ্রিম টাকা দিয়ে ধরা খেয়েছেন বলে দাবি করেন তপেস কুমার।