কৃষি উদ্যোক্তা
উপহারের ক্যাকটাস থেকে নার্সারি গড়ে সফল রাজবাড়ীর জালাল সিকদার
রাজবাড়ী সদর উপজেলার জালাল সিকদার পাঁচ বছর আগেও চাকরি করতেন। এখন নার্সারি গড়ে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন।
ঢাকায় একটি এনজিওতে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। উপহার পাওয়া দেড় শ টাকার একটি ক্যাকটাস থেকে জন্ম নেওয়া চারাগুলো দুই বছর পর বিক্রি করেন ৩৫ হাজার টাকায়। এরপর ধীরে ধীরে অনেক পরিশ্রম করে গড়ে তোলেন নার্সারি। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সুপরিকল্পিতভাবে সেই নার্সারিতে নানা প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করেন। কয়েক বছর পরই নার্সারি থেকে গাছের চারা বিক্রি করে ভালো লাভ হতে শুরু করে তাঁর। এখন প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন তিনি।
ওই সদা পরিশ্রমী উদ্যোক্তার নাম জালাল সিকদার। বাবার নাম গোলাম মোস্তফা। তাঁর বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার মেছোঘাটা এলাকায়। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জালাল সবার বড়। ২০১৯ সালে তিনি বিয়ে করেন।
‘নার্সারি একটি ভালো ব্যবসা। এতে আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। তবে নার্সারি করার ক্ষেত্রে শুধু কর্মচারীদের ওপর ভরসা করলে চলবে না। নিজে পরিশ্রম করতে হবে। নিজে পরিশ্রম করলে এবং কাজগুলো জানা থাকলে অবশ্যই সফল হওয়া সম্ভব।’
গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, রাজবাড়ী শহরের ভবানীপুর কবরস্থানের পাশে রোজগার্ডেন নামে একটি নার্সারি গড়ে তোলা হয়েছে। নার্সারিতে অনেকেই বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কিনতে এসেছেন। কর্মচারীরা কাজ করছেন। উদ্যোক্তা জালাল সিকদার এক বাগানে গাছ রোপণ করতে গেছেন। কেউ এসেছেন দেখতে। ওই নার্সারিতে গাছের চারা কিনতে এসেছেন কালুখালী উপজেলার গান্ধীমারা এলাকার বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আছে। এসব গাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল পাই। বাড়ির সামনে খনন করা হয়েছে। নতুন মাটি ফেলা হয়েছে। নতুন মাটিতে গাছ খুব ভালো হয়। এ কারণে কিছু লেবুগাছ কিনতে এসেছি। এতে বাড়ির খাওয়ার জন্য বাজারে যেতে হবে না।’
রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দা এলাকার মো. আবদুল জব্বার এই নার্সারিতে গাছের চারা কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, তিনি বিআরডিবিতে চাকরি করেন। বাড়ির ছাদে একটি ছোট্ট বাগান করেছেন। বাগানের জন্য ধরন্ত লেবুগাছ কিনতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। প্রাকৃতিক নির্মল পরিবেশে একটু ঘোরাঘুরির পাশাপাশি কাজও সেরে নিচ্ছেন।
জালাল সিকদারের নার্সারিতে কাজ করেন মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামে। আমি এলাকাতেই কাজ করতাম। এখন চার মাস ধরে এখানে কাজ করি। এখানে সারা দিন কাজ করি। বিভিন্ন গাছের কলম দিই। প্রয়োজনের গ্রাহকের বাড়িতে গিয়েও কাজ করি। বাগান করার বিষয়ে পরামর্শ দিই। সব মিলিয়ে ভালো আছি।’
নানা ধরনের কাজ বা ব্যবসা করার সুযোগ থাকার পরও নার্সারি করার ধারণা কোথা থেকে এল, জানতে চাইলে জালাল সিকদার বলেন, ‘আমি একটি এনজিওতে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি করতাম। ২০০৯ সালে ঢাকায় একটি মেলা থেকে আমার এক সহকর্মী একটি ক্যাকটাস উপহার দিয়ে ছিল। সেটি থেকে বেশ কটি ক্যাকটাস জন্মায়। বছর দুই পরে আমি ক্যাকটাসগুলো ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি। এর পর থেকে আমার গাছের প্রতি ভালোবাসা জন্মে। ২০১৬ সালে মিজানপুর ইউনিয়নের গঙ্গাপ্রসাদপুর গ্রামে চার বিঘা জমি ইজারা নিই। সেখানে মাল্টা চাষ করি। কিন্তু লক্ষ করি মানুষের ফলের চেয়ে গাছের প্রতি আগ্রহ বেশি। এরপর আমি নার্সারি করার উদ্যোগ নিই।’