বগুড়ায় দিনে–রাতে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং

শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। হিমাগারগুলোতে রাখা আলু সংরক্ষণ করতে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে।

বগুড়া জেলার মানচিত্র

বগুড়া শহরের মালতিনগর এমএস ক্লাবসংলগ্ন একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন গৃহিণী তানজলা রহমান। গত সোমবার সন্ধ্যায় দুই সন্তানকে নিয়ে পড়ার টেবিলে বসতে না বসতেই বিদ্যুৎ চলে যায়। অন্ধকারে বন্ধ বৈদ্যুতিক পাখা। ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা।

এক ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে। এরপর তিনি চুলায় রান্না তুলে দেন। রান্না শেষে টেবিলে খাবার খেতে বসতে না বসতেই বিদ্যুৎ চলে যায়। অন্ধকারে মোমবাতির আলোয় সন্তানদের মুখে খাবার দেন তিনি। রাতে বিছানায় যাওয়ার পর কয়েকবার চলে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া। গতকাল মঙ্গলবারও বিদ্যুতের আসা-যাওয়া অব্যাহত ছিল।

এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা ও রাত থেকে ভোর—অসহনীয় লোডশেডিংয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বগুড়া শহরের নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) গ্রাহকদের।

বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে ক্ষুব্ধ জলেশ্বরীতলা এলাকার গৃহিণী তানজিমা বেগম বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে গরমে অতিষ্ঠ। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। জ্বলছে না আলো, ঘুরছে না বৈদ্যুতিক পাখা। প্রচণ্ড গরমে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।’

বগুড়া শহরে দিনে-রাতে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ৮-১০ ঘণ্টা। নেসকো বগুড়া শহর ছাড়াও দুপচাঁচিয়া, শেরপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।

নেসকো সূত্রে জানা গেছে, গ্রাহকসেবার সুবিধার্থে বগুড়া শহরকে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১, ২,৩ এবং ৪ অঞ্চলে ভাগ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে সংস্থাটি। প্রচণ্ড গরমে সব এলাকাতেই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় মিলছে না বিদ্যুৎ সরবরাহ। এতে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ গ্রাহক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিপণিকেন্দ্রগুলোতে কমেছে বেচাবিক্রি। শিল্পকারখানায় উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। জেলার হিমাগারগুলোতে রাখা আলু সংরক্ষণ করতে দিন-রাতে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে নেসকোর বগুড়া পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) হাসিবুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা দিন-রাতে একেক সময় একেক রকম। এ সার্কেলে গড়ে মোট বিদ্যুতের চাহিদা ২০০ মেগাওয়াট। বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ মিলছে ১৩০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট। গড়ে প্রতিদিন ঘাটতি ৫০-৭০ মেগাওয়াট। চাহিদার কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে।

শহরের পাশাপাশি গ্রামে চলছে লোডশেডিং। সারিয়াকান্দি উপজেলার দুর্গম খাটিয়ামারী চরের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, প্রচণ্ড গরমে মানুষের হাঁসফাঁস উঠেছে। দিন-রাতে ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ৮ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ মিলছে না।

বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর অধীন সারিয়াকান্দি, ধুনট, গাবতলী, শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলার ৪ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহক। জেলার অন্য উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ থেকে।

বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর মহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বলেন, গত সোমবার সকাল ছয়টা থেকে গতকাল সকাল ছয়টা পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯৮ মেগাওয়াট। সরবরাহ মিলেছে ৭৪ মেগাওয়াট। ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুতের ঘাটতি ২৪ মেগাওয়াট। ফলে চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় দিন-রাতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সময় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত

লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বগুড়া বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আজিজার রহমান রহমান বলেন, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বিসিক এলাকায় ৯৪টি শিল্প ইউনিটে উৎপাদন কার্যক্রম বিঘ্ন ঘটছে। এক ঘণ্টা কারখানা চালুর পর এক ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। এতে কারখানায় উৎপাদন চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

রাজাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আরবি স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, সন্ধ্যা নামলেই বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। অন্ধকারে বাজারে ক্রেতা মেলে না। ব্যবসায়ীদের বেচাবিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে।