চা–শ্রমিকেরা সবাই কাজে ফিরেছেন। ভুরভুরিয়া চা বাগান, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
ছবি: প্রথম আলো

চা–শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণের পর ধর্মঘট শেষে আজ সোমবার থেকে পুরোদমে কাজে যোগ দিয়েছেন চা-শ্রমিকেরা। গতকাল রোববার চা–বাগান ছুটির দিনে অনেক চা–বাগানের শ্রমিকেরাই কাজে যোগ দেননি। আজ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের প্রতিটি চা–বাগানে শ্রমিকদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে।

আজ শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালীঘাট চা–বাগান, রাজঘাট চা–বাগান, খেজুরিছড়া চা–বাগানসহ বেশ কিছু চা–বাগান ঘুরে শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে। চা–বাগানগুলোতে টানা ১৫ দিন চা–পাতা না তোলায় চা–পাতাগুলো বেশ বড় ও শক্ত হয়ে গিয়েছে। শ্রমিকেরা হাত দিয়ে দুটি পাতা একটি কুঁড়ির পাশাপাশি সেই শক্ত ও বড় হয়ে যাওয়া চা–পাতাগুলো তুলে কারখানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন।

ভুরভুরিয়া চা–বাগানের নারী শ্রমিক রওসন রিকিয়াশন বলেন, ‘চা–বাগানের প্রতি আমাদের অনেক মায়া আছে। এখানেই আমাদের পুরো জীবনটা কেটেছে। চা–বাগানের প্রতিটা চা–গাছের সঙ্গে আমাদের আবেগ-ভালোবাসা জড়িত। আমরাই এ গাছগুলো ছোট থেকে বড় করি। গাছ বড় হলে আবার ছেঁটে দিয়ে ছোট করি। এত দিন চা–বাগানে কাজ না করতে পেরে খারাপই লেগেছিল। কিন্তু আমাদের কিচ্ছু করার ছিল না। ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে আমরা খুব কষ্ট করে সংসার চালিয়েছি। এখন ১৭০ টাকা হয়েছে। খেয়েদেয়ে বাঁচতে পারব।’

কালীঘাট চা–বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি অভান তাঁতী বলেন, গতকাল ছুটির দিন থাকায় তাঁদের চা–বাগানসহ অনেক চা–বাগানেই কাজ হয়নি। আজ সকাল থেকে শ্রমিকেরা চা–বাগানের কাজে যুক্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলন চলাকালে কারও কথায় বিশ্বাস করিনি প্রধানমন্ত্রী ছাড়া। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিরাশ করেননি।’

বাংলাদেশ চা–শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর গতকাল চা–বাগানের ছুটির দিন থেকেই চা–শ্রমিকেরা কাজে নেমেছিলেন। গতকাল কিছু চা–বাগানে ছুটির দিন থাকায় শ্রমিকেরা কাজে না গেলেও আজ দেশের প্রতিটি চা–বাগানে পুরোদমে কাজ চলছে। চা–বাগানের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে শ্রমিকেরা বেশি বেশি কাজ করছেন বলে তাঁর দাবি।

৯ আগস্ট থেকে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে দুই ঘণ্টা করে চার দিন কর্মবিরতি এবং ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করেন চা–শ্রমিকেরা। পরে গত শনিবার চা–বাগানের মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের জন্য ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে দিলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে গতকাল থেকে কাজে যোগ দেন শ্রমিকেরা।