নারায়ণগঞ্জে ঠিকাদারি নিয়ে বিরোধে বিএনপির নেতাকে বিবস্ত্র করে মারধর

মারধরপ্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদারি কাজ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধের জেরে মহানগর বিএনপির সাবেক এক সহসভাপতিকে বিবস্ত্র করে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার দুপুরে উপজেলার হরিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

পুলিশ ওই নেতাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। পরে তাঁকে শহরের বি বি রোডে অবস্থিত একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, বিএনপির ওই নেতাকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে মারধর করে তাঁর পরনের পাঞ্জাবি ও পায়জামা ছিঁড়ে ফেলা হয়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, আজ দুপুরে বন্দর উপজেলার হরিপুর এলাকায় অবস্থিত ৪১২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জনবল সরবরাহের ঠিকাদারি কাজের জন্য ওই বিএনপি নেতা ও তাঁর অনুসারীরা সেখানে যান। সেখানে সোনারগাঁ থানা বিএনপির সহসভাপতি বজলুর রহমান ওরফে ডন ও তাঁর লোকজনের সঙ্গে তাঁর বাগ্‌বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকে মারধর করে তাঁর পরনের পাঞ্জাবি ও পায়জামা ছিঁড়ে ফেলা হয়। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ওই বিএনপি নেতা হরিপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদারি কাজ নেওয়ার জন্য সেখানে গেলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে মারধর করেন। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। এ ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।

সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, একটি নীল রঙের প্রিমিও গাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফটকের সামনে যান ওই বিএনপি নেতা। এরপর ১৫ থেকে ২০ জনের একদল লোক তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরেন। এরপর তাঁকে গাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। লাঠিসোঁটা দিয়ে মাটিতে ফেলে পেটায়। পরে এলোপাতাড়ি কিল–ঘুষি ও লাথি মারায় তার পরনের পাঞ্জাবি ও পায়জামা ছিঁড়ে যায়। এ সময় দুজন পুলিশ সদস্য তাঁকে রক্ষা করতে গিয়েও ব্যর্থ হন। মারধরের পর হামলাকারীরা চলে গেলে বিবস্ত্র অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। এ সময় ওই বিএনপি নেতাকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ বলে গালি দিতে শোনা যায়।

আরও পড়ুন

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ওই বিএনপি নেতার। ওসমান পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপির রাজনীতি করলেও এলাকায় প্রভাব খাটানোসহ আধিপত্য বিস্তার করতেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই বিএনপি নেতা সাংবাদিকদের বলেন, হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জনবল সরবরাহের কাজ পেয়েছেন তিনি। আজ সেখানে দরপত্রে স্বাক্ষর করতে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় বিএনপি নেতা বজলুর রহমান ও তাঁর লোকজন তাঁকে মারধর করে পা ভেঙে দেন। তাঁর পাঞ্জাবি ও পায়জামা ছিঁড়ে ফেলেছেন। কী কারণে হামলা হয়েছে, তিনি বুঝতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘ওদের যদি কোনো চাওয়া–পাওয়া থাকত, ওরা আমাকে বলতে পারত। আমি টেন্ডারে সরকারি কাজ পেয়েছি। সেই কাজ করতে গিয়ে আমার ওপর হামলা হয়েছে।’

আরও পড়ুন

অভিযোগের বিষয়ে সোনারগাঁ থানা বিএনপির সহসভাপতি বজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদারি কাজ পেয়েছেন জেলা মোটরযান শ্রমিক লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন। আলাউদ্দিনের কাজের দালালি করতে গেলে ওই আওয়ামী লীগের দোসরকে গণপিটুনি দেন স্থানীয় লোকজন। তিনি বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও মামলা দিয়ে হয়রানি করেন।’

আরও পড়ুন