বরিশাল বিভাগে গ্যাসের দাবিতে আন্দোলনের ডাক

ইন্ট্রাকো কোম্পানির সঙ্গে সরকার ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি করেছে। যার আওতায় দ্রুতই ভোলার গ্যাস ঢাকার বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে সরবরাহ করা হবে।

গ্যাস
ফাইল ছবি: এএফপি

বরিশালসহ বিভাগের জেলাগুলোকে বঞ্চিত করে ভোলার গ্যাস ঢাকার শিল্পাঞ্চলে সরবরাহ চুক্তি বাতিলের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায়ে বিভাগের প্রতিটি জেলায় নাগরিক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৮ জুলাই হবে পদযাত্রা। ভোলার গ্যাস রক্ষায় গঠিত ‘দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলন’র ব্যানারে ১১ জুলাই এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এই পদযাত্রা সফল করতে ১৫ ও ১৬ জুলাই নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পথসভা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৮ জুলাই সকালে বরিশাল নগরের সদর রোডের অশ্বিনীকুমার হলের সামনে থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে। নগরের কাশিপুর এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় অভিমুখে এই পদযাত্রা হবে।

ভোলার গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে সরবরাহের দাবি দীর্ঘদিনের। বরিশালের শিল্প উদ্যোক্তারাও দীর্ঘদিন এই দাবি জানিয়ে আসছেন। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালে এক জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোলার গ্যাস বরিশালের কলকারখানায় ও আবাসিক খাতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে এই দাবি বাস্তবায়নে এখনো তেমন কোনো উদ্যোগ না থাকলেও ভোলার গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তর করে সিলিন্ডারে ঢাকার শিল্পাঞ্চলে সরবরাহের চুক্তি করার পর এই দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।

নাগরিক নেতারা জানান, সঞ্চালন লাইন না থাকায় ভোলা থেকে উত্তোলন করা গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ভোলার গ্যাস কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) হিসেবে সিলিন্ডারে ভরে পৌঁছে দেওয়া হবে শিল্পকারখানায়। এ জন্য গত ২১ মে উত্তোলনের দায়িত্বে থাকা সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়েছে। ভোলা থেকে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছে বেসরকারি কোম্পানি ইন্ট্রাকো। চুক্তি অনুযায়ী, ইন্ট্রাকো সরকারের কাছ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ১৭ টাকা দরে কিনে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা দরে বিক্রি করবে। এর আগে ১০ মে ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে তিতাসের আওতাধীন শিল্পকারখানায় সরবরাহের বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করে জ্বালানি বিভাগ। এতে গ্যাসের দাম, বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের কমিশন, গ্যাস সরবরাহকারীর জন্য পালনীয় শর্তের বিষয় উল্লেখ করা হয়।

ভোলায় গ্যাস উত্তোলনের কাজটি করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। আর বাপেক্সের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে তা সরবরাহ করে সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। সুন্দরবনের কাছ থেকে কিনে নিয়ে শিল্পে গ্যাস সরবরাহের কাজটি করবে সিএনজি খাতের কোম্পানি ইন্ট্রাকো।

ভোলার গ্যাস রক্ষায় গঠিত ‘দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলন’-এর বরিশালের সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ইন্ট্রাকো কোম্পানির সঙ্গে সরকার ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি করেছে। যার আওতায় দ্রুত ভোলার গ্যাস সিএনজি করে ঢাকার বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে সরবরাহ করা হবে। ভোলায় গ্যাস উদ্বৃত্ত থাকার কথা বলে এই চুক্তি করা হয়েছে। অথচ বরিশালের শিল্পাঞ্চলসহ আবাসিক খাতে এখন পর্যন্ত এই গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়নি। ভোলার গ্যাস দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন দীর্ঘদিনের দাবি।

মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘এই চুক্তি দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। এই চুক্তি দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নকে বহুগুণ পিছিয়ে দেবে। তাই আমরা এই অন্যায় চুক্তি অবিলম্বে বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি। বরিশাল বিভাগের সব জেলায় এই দাবিতে একযোগে আন্দোলন হবে। এরপরও যদি এই চুক্তি থেকে সরকার সরে না আসে, তাহলে আমরা ভোলা অভিমুখে লংমার্চসহ কঠোর কর্মসূচিতে যাব। এরই মধ্যে এই দাবিতে বিভাগের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন।’

বরিশালের শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, পদ্মা সেতু চালুর পর বরিশালের যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এখানে নানা শিল্প বিকাশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু গ্যাস না থাকায় শিল্পের বিকাশ হচ্ছে না। শিল্প উদ্যোক্তারাও এ জন্য বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে পদ্ম সেতুর প্রকৃত সুফল পাচ্ছে না এ অঞ্চল।

এ ব্যাপারে বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সাইদুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় গ্যাস যাবে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের স্থানীয় শিল্পের বিকাশ করার জন্য এখানকার চাহিদা পূরণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে এ অঞ্চলে শিল্প খাত বিকাশ অসম্ভব। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী বরিশালে এক সমাবেশে এই দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।’

সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমি যত দূর জানতে পেরেছি, ভোলা থেকে বরিশালে পাইপলাইনের জন্য জিটিসিএল সম্প্রতি সাড়ে ১৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। ৬৫ কিলোমিটার এই পাইপলাইনটি হবে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের। আমরা দাবি জানাই, অবিলম্বে এই প্রকল্পটি অনুমোদন করা হোক।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকার পরিচালিত সংস্থা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) আবু সাঈদ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ভোলা থেকে গ্যাস পাইপলাইন বাইরে আনার বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। ইতিমধ্যে এর প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।