মানিকগঞ্জে হাসপাতালের সামনেই মশার প্রজননক্ষেত্র
হাসপাতালের প্রাঙ্গণে জমে থাকা পানিতে মশা ও মশার লার্ভা জন্মানোর দৃশ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতাই ফুটে উঠেছে।
হাসপাতালের নালায় ময়লাযুক্ত পানি। জরুরি বিভাগের প্রাঙ্গণের অবস্থা আরও খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে পানি জমে থাকায় সেখানে জন্ম নিয়েছে শেওলা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনা। এসবে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য মশা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঠিক এমন চিত্রই দেখা গেল মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোথাও তিন দিনের বেশি পানি জমে থাকলে সেখানে এডিস মশা জন্মাতে পারে। এই মশা থেকেই ছড়ায় ডেঙ্গু রোগ। আর কয়েক মাস ধরে দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলছে। ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়েছে মানিকগঞ্জের হাসপাতালগুলোতেও।
মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিলুফা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন আবদ্ধ পানিতে মশা, মাছি, ব্যাকটেরিয়া, পোকামাকড় জন্মায়। সেখান থেকে নানা ধরনের রোগজীবাণু ছড়ায়। এমনকি সেখানে এডিস মশাও জন্মাতে পারে। আবদ্ধ পানিতে কীটনাশক প্রয়োগ কিংবা চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
দিনের বেলায়ও মশা কামড়ায়। সন্ধ্যার পর মশার উপদ্রব আরও বেড়ে যায়।চুন্নু মিয়া, ফল ব্যবসায়ী
মানুষ যখন ডেঙ্গু আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছে, তখন হাসপাতালের প্রাঙ্গণে জমে থাকা পানিতে মশা ও মশার লার্ভা জন্মানোর দৃশ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতাই ফুটে উঠেছে। এতে হাসপাতালে আসা অসংখ্য রোগী, রোগীর স্বজন এবং সেখানে অবস্থান করা লোকজনকে ডেঙ্গু ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তবে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে আসছে না।
জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের যুববিষয়ক সম্পাদক ও মানিকগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানেরই দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে জমে থাকা পানি থেকে ডেঙ্গু জান্মাতে পারে। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর রাখতে হবে।
তবে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিনের দাবি, হাসপাতালের চারপাশে সমস্ত ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। হাসপাতালের চত্বরে আটকে থাকা পানি অপসারণের করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দেশের অন্যান্য স্থানের মতো মানিকগঞ্জেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যত্রতত্র পানি জমে থাকা, ময়লা আবর্জনা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে মশার উপদ্রব বেড়েছে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের ডায়রিয়া ইউনিটের ভবনসংলগ্ন নালায় ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি জমে আছে। এর পাশেই জরুরি বিভাগের ৩০ থেকে ৪০ গজ পশ্চিমে নিচু স্থানে জমে আছে পানি। সেখানে ডাবের খোসাও রয়েছে। এই পানিতে শেওলা ও মশার লার্ভা ভাসছে।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফলপট্টির সামনে নালাতেও দীর্ঘদিন ধরে পানি জমে আছে। সেখানেও মশার লার্ভা দেখা গেছে। চুন্নু মিয়া (৪২) নামের এক ফল ব্যবসায়ী বলেন, ‘দিনের বেলায়ও মশা কামড়ায়। সন্ধ্যার পর মশার উপদ্রব আরও বেড়ে যায়। আমার দোকানের সামনে নালায় ব্যক্তি উদ্যোগে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়েছি।’
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫২ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছেন।
গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১৬৪ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এ ছাড়া আরও অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, জেলায় ডেঙ্গু বাড়লেও পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল রয়েছে। চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়েছে।