গিলা ফলে সুপ্রয়ার মিনিয়েচার, ফুটিয়ে তোলেন পাহাড়ের গল্প

গিলা ফলের ওপর ছবি আঁকেন তিনি। পাহাড়ের প্রকৃতি, কোলাহল, আনন্দ-উৎসব, সুখ-দুঃখ সবকিছুই রংতুলিতে ফুটিয়ে তোলেন গিলায়। নিজের এই চিত্রকর্মের তিনি দিয়েছেন—গিলেফুল মিনিয়েচার।

গিলা ফলের ওপর আঁকা চিত্রকর্মের পাশে শিল্পী সুপ্রয়া চাকমা
ছবি: তাঁর সৌজন্যে

শৈশব থেকেই কাগজে আঁকাআঁকি করতেন তিনি। কখনো বসতেন পাহাড়ের কোলে, আবার কখনো বড় কোনো গাছের ছায়ায়। আশপাশের দৃশ্য যা দেখতেন, সেটিই ফুটিয়ে তুলতেন রংতুলিতে। তাঁর সেই আঁকাআঁকি এখনো অব্যাহত। তবে কাগজ কিংবা কাপড়ে নয়, এখন বুনো এক লতার ফল হয়ে উঠেছে তাঁর ক্যানভাস।

বলছিলাম সুপ্রয়া চাকমার কথা। গিলা ফলের ওপর ছবি আঁকেন তিনি। পাহাড়ের প্রকৃতি, কোলাহল, আনন্দ-উৎসব, সুখ-দুঃখ—সবকিছুই রংতুলিতে ফুটিয়ে তোলেন গিলায়। তিনি নিজের এই চিত্রকর্মের নাম দিয়েছেন ‘গিলেফুল মিনিয়েচার’। শিল্পকলার একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা মিনিয়েচার আর্ট। এ শাখার চিত্রকর্ম আয়তনে ছোট, কিন্তু তাতে রয়েছে ঐতিহ্যের ছোঁয়া।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন সুপ্রয়া। এরপরই শুরু করেছেন মিনিয়েচার চর্চা। গিলায় ছবি আঁকার কথা কেন মাথায় এল, তা জানতে চাইলে সুপ্রয়া জানান, গিলা ফলটি দেখতে অনেকটা শিমের মতো হলেও আকারে বেশ বড়। এটিকে পাহাড়ে পবিত্র ফল মনে করা হয়। গিলা ফুল অরণ্যে জন্ম নেয়, সহজে ফোটে না—এমন কথাও লোকমুখে প্রচলিত। এ কারণে পাহাড়িরা মনে করেন, এ ফুলের সঙ্গে জীবনের সুখ ও সমৃদ্ধি জড়িত। তাই পাহাড়িদের লোকজ জীবন ও বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই ফলেই তাঁদের জীবনের কথা তুলে ধরার কথা মাথায় আসে।

সুপ্রয়ার বাড়ি খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদীঘেঁষা দক্ষিণ খবং পুড়িয়ায়। তাঁর বাবা মিন্টু বিকাশ চাকমা ও মা গীতা চাকমা। বাবার চাকরির সুবাদে কিছুটা সময় কেটেছে জেলার মানিকছড়ি উপজেলায়। সেখানেই তিনি রানি নিহার দেবী উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করেন। এরপর খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। বর্তমানে তিনি খাগড়াছড়ি পুলিশ লাইনস হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।

২০২৩ সালে খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত ‘রংতুলিতে পাহাড় ও শিল্পভাবনা’ নামের এক চিত্রপ্রদর্শনীতে প্রথম গিলার ওপর আঁকা মিনিয়েচার প্রদর্শন করেন সুপ্রয়া। এর পর থেকেই তাঁর মিনিয়েচারের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস থেকে শুরু করে অনেকের বাসাবাড়িতে স্থান পাচ্ছে তাঁর এই ব্যতিক্রমী চিত্রকর্ম।

গিলা ফল দেখতে শিমের মতো হলেও বেশ দীর্ঘাকৃতির। এই ফলের ওপরই পাহাড়ের জীবন, ঐতিহ্যের নানা ছবি আঁকেন সুপ্রয়া চাকমা
ছবি: তাঁর সৌজন্যে

সুপ্রয়াও থেমে থাকতে চান না। তাঁর এ চিত্রকর্ম তিনি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে পরিচিতি করাতে চান। এ ছাড়া পাহাড়ের নতুন প্রজন্মকে সাংস্কৃতিক ও শিল্পচর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে চান। ‘নৌ-প্রতিরক্ষা ইতিহাস’, ‘পাহাড়ি জীবনের চিত্র’, ‘প্রকৃতির সৌন্দর্য’, ‘মাতৃত্বের শক্তি’ ইত্যাদি শিরোনামে বিভিন্ন চিত্রকর্ম রয়েছে তাঁর।

জানতে চাইলে সুপ্রয়া চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি চিত্রকর্মের মাধ্যমে পাহাড়ের মানুষের জীবনধারা ও প্রকৃতি ফুটিয়ে তুলে যেতে চান। পাহাড়ের আরও কিছু শিল্পীকে এ ধারার চিত্রকর্মে উৎসাহিত করতে চান তিনি।