জায়েদা খাতুন ‘বয়স্ক’ হওয়ায় তাঁর কাজ করার সুযোগ দেখছেন না ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী

গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকায় গাছা থানা আওয়ামী লীগের মূল্যায়ন সভায় বক্তব্য দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসন রাসেল। সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলেও বয়সের কারণে তাঁর কাজ করার সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। তাঁর দাবি, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সব দিক থেকে যথার্থ ছিল। কিন্তু বিষয়টি তাঁরা মানুষকে বোঝাতে পারেননি।

আজ সোমবার সকালে গাজীপুর মহানগরের গাছা থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নির্বাচন–পরবর্তী মূল্যায়ন সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আমাদের ক্যান্ডিডেট সব দিক থেকে যোগ্য, এটা কেন আমরা বোঝাতে পারলাম না। যিনি (জায়েদা খাতুন) নির্বাচিত হয়েছেন, আসলেই কি তাঁর সেভাবে কিছু করার সুযোগ আছে। সিটি করপোরেশনে কাজ করতে হলে মন্ত্রণালয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়।...তাঁকে অর্থ আনতে হবে, দৌড়াতে হবে, মিটিং করতে হবে, এটা কি সম্ভব? উনি কি পারবেন। উনি যেহেতু একজন বয়স্ক মানুষ, ইচ্ছা করলেও তো উনি পারবেন না। কেন এটা আমরা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে পারলাম না।’

আরও পড়ুন

আক্ষেপ করে জাহিদ আহসান বলেন, ‘গত ১০ বছর আমরা কত কষ্ট করেছি, একবার ভারপ্রাপ্ত আবার মেয়র আবার ভারপ্রাপ্ত। এভাবে কি একটা সিটি করপোরেশন চলতে পারে। এখন আবার এই পাঁচ বছর কী হবে, সেটি আল্লাহই জানেন।’

গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ১৬ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লাকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। নির্বাচনে পরাজয়ের তিন দিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আজমত উল্লাকে ডেকে পাঠান। সেখান থেকে এসে গাজীপুর মহানগরের থানা, ওয়ার্ড ও বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচন–পরবর্তী মূল্যায়ন সভার ডাক দিয়েছেন আজমত উল্লা। থানা ও ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের নিয়ে ৩১ মে থেকে নির্বাচন-পরবর্তী মূল্যায়ন সভার আয়োজন করা হয়।

এর ধারাবাহিকতায় আজ গাছা থানা আওয়ামী লীগের মূল্যায়ন সভা হয়। এতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা হয়তো ভেবেছিলেন ২০১৮ সালে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, এবারও সেভাবেই জয়লাভ হবে। ফলে ঘরে ঘরে না গিয়ে ভোট না চেয়ে কাউন্সিলর নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। বারবার মানুষের কাছে গেলে যারা ভোট দিত না তারাও বিরক্ত হয়ে আমাদের ভোট দিত। যেটা কল্পনাতেও আসে না, সেখানেও আমরা পরাজিত হলাম। আমি মনে করি এগুলো চিহ্নিত করার সময় এসেছে। এর আগে যখন মেয়রকে (জাহাঙ্গীর আলম) বহিষ্কার করা হলো তখন যদি এদের চিহ্নিত করা যেত, তাহলে আজকের এই সমস্যা হতো না।’

গাছা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে মূল্যায়ন সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আদম আলী, দলীয় কর্মী মো. শাহজাহান আলী, শামছুল হক প্রমুখ। জাহিদ আহসান বলেন, ‘আমরা যখন গণসংযোগে ব্যস্ত ছিলাম, তখন তাঁরা (জায়েদা খাতুনের পক্ষ) টাকা বিলাইত। অনেকেই কষ্ট করেছেন, কিন্তু ঠিকঠাক ফলাফল আসেনি। এখন আপনারা বের করেন কেন ভোট পাইনি। এগুলো বের করতে না পারলে গাছা থানার ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাবে। যারা দলকে ভালোবাসে, নৌকাকে ভালোবাসে, তাদেরকে চিহ্নিত করেন।’

মূল্যায়ন সভায় হট্টগোলের ঘটনাও ঘটে। এক কর্মীর বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সেখানে লোহার চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে আজকে একটা ঘটনাটা ঘটল। একদিকে হাইরা আছি আবার মারামারি করছেন। তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা কী শিক্ষা নিয়ে গেল। যাঁরা মারামারি করছেন, তাঁরা ফাঁক দিয়ে ঠিকই চলে গেছেন, কিন্তু সাধারণ মানুষকে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।’

হট্টগোলের বিষয়টি উল্লেখ করে আজমত উল্লা বলেন, ‘যেকোনো সভায় এ ধরনের হট্টগোল করার অর্থ হলো দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। এটা আমাদের জন্য দুঃখজন। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন যখন আমাদের মিটিংয়ে এসে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তৎপরতা চালায়। একজন আওয়ামী লীগের কর্মী হিসাবে দুঃখজনক, লজ্জাজনক।’

নির্বাচনে পরাজয় প্রসঙ্গে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা বলেন, ‘আমাকে মানুষ হিসেবে যদি অপছন্দ হয়, কষ্ট দিতে চান, আরও কষ্ট দেন, আমার আপত্তি নেই। দুঃখ দিতে চান আরও দেন, কাঁদাইতে যদি চান প্রকাশ্যে কাঁদাতে পারবেন না। তবে আমি কাদি না, এটা ঠিক না। তবে দয়া করে আমার নেত্রী শেখ হাসিনাকে কেউ দুঃখ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আমি সাংগঠনিক লোক। যারা মুনাফেকি করেছে, তাদের বিচার আল্লাহ করবেন। এখানে অনেকেই আছেন, যাঁরা নিজের টাকা খরচ করে ঘড়িকে জিতাইছেন। কারও অমঙ্গল কামনা করি না, কাজ করেন, যে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেগুলো করেন। ট্যাক্স মওকুফ করার কথা বলেছেন, কীভাবে করবেন জানি না, কিন্তু করতেই হবে।’