সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল শুরু, পুলিশ-শ্রমিক পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা সড়ক অবরোধের কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। সোমবার দুপুরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক তেলিচালা এলাকায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কারখানার শ্রমিকেরা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এ অবরোধ বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চলে। সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে অবরোধ থাকায় মহাসড়কের উভয় দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

এদিকে পুলিশ বেলা একটার দিকে মৌচাক তেলিরচালা এলাকায় শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রথমে শ্রমিকেরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়েন, পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এ সময় বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কিছু যানবাহন।

কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ জানায়, উপজেলার তেলিরচালা এলাকার পূর্বাণী গ্রুপের করিম টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকেরা সর্বনিম্ন মূল বেতন ১৫ হাজার টাকা করার দাবিতে আজ সকাল ৯টায় বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় আশপাশের লগোজ অ্যাপারেলস, হাইড্রো অক্সাইড সোয়েটার কারখানা, এপিএস অ্যাপারেলস ও বে ফুটওয়ার কারখানার শ্রমিকেরা তাঁদের সঙ্গে একই দাবিতে বিক্ষোভে যোগ দেন। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে দেন। সকাল ৯টা থেকে শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করলে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা পল্লী বিদুৎ এলাকা পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন লোকজন।

আজমেরী পরিবহনের চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টায় কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকা থেকে রওনা হয়েছি, এখন বেলা দেড়টা। সকাল থেকেই রাস্তায় বসে আছি।’

ওই সড়কে চলাচলকারী আসাদুল ইসলাম বলেন, প্রায় তিন ঘণ্টা বসে থেকে হেঁটে রওনা হয়েছেন। শুনেছেন, গাজীপুরের ভোগড়া পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

বেতন বাড়ানোর দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করছেন বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা। সোমবার সকাল ৯টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক তেলিরচালা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় লোকজন বলেন, খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানার পুলিশ ও শিল্প পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের প্রথমে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলে শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পরে পুলিশ শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।

আন্দোলনরত একাধিক শ্রমিক বলেন, ২০১৮ সাল থেকে সহায়তাকারীর (হেলপারের) বেতন ৮ হাজার ২০০ টাকা এবং সুপারভাইজারের বেতন ১১ হাজার টাকা। এরপর আর কোনো বেতন বাড়ানো হয়নি। জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে তাঁদের জীবন চলছে না। এক কেজি মুলার দাম ৮০ টাকা, ১ কেজি শিমের দাম ১২০ টাকা। গ্যাসের দাম বেড়েছে, বাসাভাড়া বেড়েছে। তাঁদের বেতন ২৩ হাজার করতে হবে। এটাই তাঁদের দাবি। এ দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন করে যাবেন।

আরও পড়ুন

পূর্বাণী গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (কোয়ালিটি) মো. খসরু আহমেদ বলেন, আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা জড়ো হয়ে তাঁদের কারখানায় হামলা চালিয়েছে। তাঁদের কারখানার শ্রমিকদের উসকানি দিয়েছে এবং ভাঙচুরও করেছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, বেতন বাড়ানোর দাবিতে ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তাঁরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেছেন। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় কিছু পাল্টাপাল্টি ধাওয়াও হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।