‘আতঙ্কে’ মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে না, কমে গেছে বাস চলাচল

রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে বাস যাচ্ছে। তবে যাত্রী কমে যাওয়ায় অনেক বাস বন্ধ আছে। আজ শুক্রবার সকালে রংপুরের কামারপাড়া ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

ঢাকায় বিএনপির ডাক দেওয়া গণসমাবেশের আগে রংপুর থেকে ঢাকামুখী বাসগুলোতে যাত্রীসংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে এই রুটে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন মালিকেরা।

বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলছেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে সৃষ্ট অবস্থায় জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ কারণে জরুরি কাজ না থাকলে কেউ ঢাকামুখী হচ্ছেন না।

আজ শুক্রবার সকালে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মডার্ন মোড়, কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট মহাসড়কের মাহিগঞ্জ সাতমাথা, দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়-নীলফামারী মহাসড়কের মেডিকেল মোড়, নগরের কামারপাড়া ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কগুলোতে আন্তজেলার বাস চলাচল স্বাভাবিক আছে। কিন্তু ঢাকাগামী বাসের সংখ্যা কমে গেছে। প্রতিটি কোম্পানি আগে এক ঘণ্টা পরপর বাস ছাড়লেও এখন তিন ঘণ্টা পর পর ছাড়ছে। এতেও পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পরিবহন কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপকেরা।

সকাল ১০টার দিকে মডার্ন মোড় এলাকায় রুহুল আমিন নামের এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর এ প্রতিবেদকের। তিনি গাজীপুরে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য আজ সকাল ৮টায় হানিফ পরিবহনের টিকিট কেটেছিলেন তিনি। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারেন ৮টার গাড়িতে যাত্রী মাত্র দুজন, সে জন্য বাস যাবে না। তিন ঘণ্টা পর তিনটি বাসের যাত্রী একসঙ্গে নিয়ে যাবে। রুহুল আমিন বলেন, ‘তাতেও অসুবিধা নেই। একটু দেরিতে হলেও যাওয়া তো যাবে।’
মডার্ন মোড় এলাকায় শরিফুল ইসলাম নামে আরেকজন যাত্রী বলেন, ‘অতি জরুরি কাজে ঢাকায় যেতে হবে। কিন্তু এসে দেখি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করছি।’

যাত্রী না পাওয়ায় বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন মালিকেরা
ছবি: প্রথম আলো

এভাবে ঢাকাগামী সব কটি পরিবহনে যাত্রী কমে যাওয়ায় বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন মালিকেরা। টিকিট বিক্রির পর পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় ওই যাত্রীদের অন্য কোম্পানির বাসে তুলে দিচ্ছেন কেউ কেউ।

হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক হোসেন আলী বলেন, ‘সকাল সাতটা থেকে হানিফ পরিবহনের এক ঘণ্টা পর পর বাস ঢাকার উদ্দেশে চলাচল করে। কিন্তু ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন থেকে যাত্রী একেবারে কমে গেছে। তাই যাত্রীদের সংখ্যার ওপর নির্ভর করছে বাস চলাচল। এক ঘণ্টা পর পর বাস থাকলেও এখন তিন ঘণ্টা পর পর বাস চলাচল করছে। তবুও যাত্রী কম।’

রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফতাবুজ্জামান বলেন, কয়েক দিন থেকে ঢাকার বাসে যাত্রী একদম থাকছে না। মালিকদের লোকসান হচ্ছে। তার ওপর আগামীকাল ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ। পথে পথে ভোগান্তি তো আছেই।

যাত্রী কমে যাওয়ার পেছনে দুটি কারণের কথা বলেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির এই সমাবেশের আগে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূতভাবে এই যে কয়েক দিন ধরে বলা ‘খেলা হবে’, ‘খেলা হবে’ এতে করে জনমনে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ জন্য খুব জরুরি না হলে মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছেন না। অন্যদিকে পুলিশের ভূমিকাও বেশ নেতিবাচক। মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে সাধারণ যাত্রীদের যেভাবে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করা হচ্ছে, তাতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। এসব এড়াতেই মানুষ এখন ঢাকার দিকে কম যাচ্ছে।’