বৃদ্ধাকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল, ছেলে-পুত্রবধূসহ গ্রেপ্তার ৫
এক বৃদ্ধাকে মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে খোঁজ করে জানা যায়, ঘটনাটি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের হাঁপানিয়া রামচন্দ্রপুর গ্রামের। ২৩ আগস্টের ঘটনা এটি। প্রতিবেশীদের কেউ ভিডিওটি ধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দেন। গতকাল শনিবার এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর বিষয়ে জানা গেছে, আগাছায় ভরা মাটিতে পড়ে থাকা বৃদ্ধার নাম কাঞ্চন খাতুন। বয়স ৭৫ বছর। প্রথমে পুত্রবধূ সোনালী খাতুন তাঁকে চেপে ধরে বেদম মারধর করেন। পরে ছেলে নজরুল ইসলাম এগিয়ে এসে মাকে বারবার মাটিতে আছড়ে আছড়ে মারতে থাকেন। বৃদ্ধা তখন চিৎকার করতে থাকেন।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে গতকাল রাতে ছেলে ও পুত্রবধূসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।
এই পাঁচজন হলেন বৃদ্ধার ছেলে নজরুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী সোনালী খাতুন, শ্যালক মনিরুজ্জামান, শ্যালিকা ফরিদা খাতুন ও মুরশিদা খাতুনকে আটক করা হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বৃদ্ধা কাঞ্চন খাতুনের ছোট মেয়ে আম্বিয়া খাতুন বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মামলার বাদী আম্বিয়ার অভিযোগ, ‘মায়ের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কেউ ভাবির (সোনালী খাতুন) কাছে বলে, মা নাকি তাঁকে গালমন্দ করেছেন। সেই কথা শুনেই ভাবি সরাসরি মাকে মাটিতে ফেলে ও বারবার চেপে ধরে মারধর করেন। পরে ভাই এসে মাকে আছড়ে আছড়ে মারে। মায়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমি মাকে নির্যাতনের বিচার চাই।’
আজ রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, মারধরের আঘাতে ব্যথা ও ভয়ে কুঁকড়ে আছেন ওই বৃদ্ধা। এলাকার লোকজন বুঝিয়েও তাঁকে হাসপাতালে নিতে পারছিলেন না। পরে দুপুর ১২টার দিকে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিজু তামান্না গিয়ে বৃদ্ধাকে বুঝিয়ে সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন।
ইউএনও রিজু তামান্না বলেন, ‘ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে প্রশাসনের নজরে আসে। খবর পেয়ে থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে কিছু লোক বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে সেনাবাহিনীর একটি টিম গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অভিযুক্তদের আটক করে। ওই বৃদ্ধা মারধরে বেশ আহত হয়েছেন এবং একধরনের ট্রমার মধ্যে আছেন। আমি আজ ওই বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধাকে আমার গাড়িতে করে এনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পঁচাত্তর বছর বয়সী কাঞ্চন খাতুনের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে এবং দুই ছেলে ঢাকায় থাকেন। বাড়িতে ছেলেদের জন্য পাকা ঘর থাকলেও ওই বৃদ্ধাকে রাখা হয়েছে প্রায় পরিত্যক্ত একটি ঝুপড়ি ঘরে।
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ওই বৃদ্ধাকে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় ছেলে, পুত্রবধূসহ গ্রেপ্তার পাঁচজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।