হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন জহিরুল ও শিশু তাবাসসুম। বুধবার সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে
ছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের এক পক্ষের হামলায় প্রতিপক্ষের তিনজনসহ মোট পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আজ বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে উপজেলার আধারা ইউনিয়নের সোলারচর গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন জয় মস্তান (২০), জহিরুল (৩২), মো. জুয়েল (১৯), পথচারী সালাউদ্দিন (৩০) ও সাত মাস বয়সী শিশু তাবাসসুম। সন্ধ্যায় তাঁদের উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জয় মস্তান, তাবাসসুম ও জুয়েলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আধারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ মিয়া ও দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি আলী হোসেনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। আজ সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে স্থানীয় চরডুমুরিয়া বাজার থেকে আলী হোসেন পক্ষের জয় মস্তান, জহিরুল ও জু‌য়েল সোলারচর গ্রামে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। সোলারচর গ্রামে পৌঁছানোর পর সেখানে আগে থেকে ওত পেতে থাকা সুরুজ মিয়ার পক্ষের আহাদুল, মনাসহ তিন-চারজনের একটি দল ওই তিনজনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। এ সময় জয় ও জহিরুল পালানোর চেষ্টা করলে আহাদুল, মনারা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন জয় মস্তান, জহিরুল, জু‌য়েল ও পথচারী সালাউদ্দিন ও সাত মাস বয়সী শিশু তাবাসসুম।

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এস এম ফেরদৌস বলেন, সন্ধ্যায় শিশুসহ পাঁচজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁরা সবাই ছররা গুলিবিদ্ধ ছিলেন। এর মধ্য তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা আলী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কিছু হলেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ মিয়ার লোকজন তাঁদের লোকজনকে মারধর করেন। আজ তাঁদের লোকজনের ওপর হামলা করে গুলি চালিয়েছে। এতে তাঁদের লোকজনসহ সাত মাসের এক শিশুও আহত হয়েছে। তাঁরা ঘটনায় জড়িত সুরুজ মিয়া ও তাঁর লোকজনের উপযুক্ত বিচার চান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুরুজ মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। আধারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নিজেদের মধ্যে শক্তি প্রদর্শন ও আধিপত্য ধরে রাখতে ২০ বছর ধরে পক্ষ দুটির মধ্যে বিরোধ চলছে। তাঁদের মারামারির কারণে পুরো ইউনিয়নের মানুষ অশান্তিতে আছে। কয়েক দিন পরপর তাঁরা ভয়ংকর সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। তাঁদের জন্য সাধারণ মানুষও হতাহত হচ্ছে।

ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, আজকের ঘটনায় কয়েকজন সাধারণ মানুষও গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বিষয়টি সমাধানে স্থানীয়, শহর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে একাধিকবার বসা হয়েছে। প্রতিবার মীমাংসা করার পর তাঁরা আবার সংঘর্ষে জড়ান। ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মতো তিনিও তাঁদের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চান।

মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হামলার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি। তবে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।