অপরিকল্পিত নালা নির্মাণ, জমে থাকে পানি

ওয়ার্ডটি মেহেরচণ্ডী পূর্ব, দক্ষিণ, পশ্চিম, উত্তর ও মধ্যপাড়া, চন্দ্রিমা থানা, পদ্মা আবাসিক এলাকা নিয়ে গঠিত। 

নতুন নির্মাণ করা নালাটি উঁচু হওয়ায় পানি জমে আছে। গত বুধবার রাজশাহী নগরের উত্তর মেহেরচণ্ডী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে চলে গেছে একটি কাঁচা রাস্তা। ওই রাস্তা দিয়ে পূর্ব দিকে যেতেই চোখে পড়ে একটি কংক্রিটের নালা (ড্রেন)। সমতল জমি থেকে এক–দেড় ফিট উঁচু সেই নালা স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা। নালার সামনে কিছু কংক্রিট ভেঙে পড়ে আছে। নেই কোনো রাস্তা।

এমন একটি ড্রেনের দেখা মেলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেহেরচন্ডী পূর্বপাড়া এলাকায়। এই ওয়ার্ডটি মেহেরচণ্ডী পূর্ব, দক্ষিণ, পশ্চিম, উত্তর ও মধ্যপাড়া, চন্দ্রিমা থানা, পদ্মা আবাসিক, জামালপুর এলাকা নিয়ে গঠিত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নালাটি বছর খানেক ধরে রাস্তা ছাড়াই পড়ে আছে। এই নালা দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হয় না। কারণ, মাটির ওপর নালাটি।

এদিকে মেহেরচণ্ডী মধ্যপাড়ায় একটি রাস্তার পাশে একটি গলি রাস্তা নেমে গেছে। নালাসহ রাস্তাটি কয়েক মিটার পরই শেষ হয়ে যায়। কয়েক মিটার কাজ বাকি রেখে আবার নালাসহ রাস্তাটি করা হয়েছে। আর নালা নির্মাণ করা হয়েছে আশপাশের বাড়ির চেয়ে উঁচু করে। কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রাস্তার ওই অংশটুকুর জমি একটু নিচু। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান স্থানীয় বাসিন্দাদের ওই জায়গাটুকু ভরাট করে দিতে বলেছিলেন। পরে স্থানীয় কয়েকটি পরিবার মিলে টাকা তুলে মাটি ও কংক্রিটের রাবিশ এনে ফেলেন সেখানে। কিন্তু পরে আর নালাটির কাজ শেষ হয়নি।

ওয়ার্ডের দায়রাপাক মোড় থেকে পশ্চিম দিকে একটি নালা চলে গেছে চকপাড়া এলাকার দিকে। এটি চকপাড়ার অংশ থেকে পূর্ব দিকে ক্রমশ নিচু করে করা হয়েছিল। ওই এলাকার পানি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিক দিয়ে চলে যেত। কিন্তু বছর খানেকের বেশি সময় ধরে ওই নালার পানি কোনো দিকেই যেতে পারে না। পূর্ব দিকে দায়রাপাক মোড় থেকে একটি নালা করা হয়েছে উত্তর দিকে খড়খড়ি বাইপাস মোড় পর্যন্ত। রাস্তার সঙ্গে লাগানো ওই নালা আগের নালার চেয়ে বেশি উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। বর্ষাকালে পানি না যেতে পারলে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা হবে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই এলাকার বাসিন্দা এ কে এম ওয়াহিদ উদ্দিন বলেন, নালা নির্মাণ করার আগে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার ছিল। কিন্তু এখানে যেমন পরিকল্পনা নেই, তেমনি জবাবদিহি নেই। এ কারণে অপচয় বেশি হয়।

মেহেরচণ্ডী পূর্ব পাড়ার এলাকার মো. রানা বলেন, তাঁরা সিটি করপোরেশনকে ট্যাক্স-ভ্যাটসহ নানা ধরনের বিল দিয়ে থাকেন। কিন্তু সে অনুযায়ী সেবা পান না। রাস্তা, নালা করার জন্য দীর্ঘ সময় নেওয়া হয়েছে। এতে মানুষের চলাচলে অসুবিধা হয়েছে। রাস্তা-নালা তড়িঘড়ি করে করা হচ্ছে। কাজের মান ভালো নয়।

তফসিল অনুযায়ী রাজশাহী সিটি করপোরশনে নির্বাচনে ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। বাছাই ২৫ মে এবং আগামী ১ জুনের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. আকতারুজ্জামান এবারও মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনিসহ প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ রানা, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন বাবু, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা খলিলুর রহমান ও রবিউল ইসলাম। এই ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার।

গত পাঁচ বছরে ওয়ার্ডের অলিগলিতে অনেক উন্নয়নকাজ হয়েছে। অনেক জায়গায় নতুন রাস্তা ও নালা হয়েছে। অনেকগুলো কাজ শেষ হয়নি। কোথাও রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে, কোথাও শুধু নালা করে রাখা হয়েছে। কোথাও তড়িঘড়ি করে পিচ দেওয়া হয়েছে। এতে কাজের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

বর্তমান কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান বলেন, গত পাঁচ বছরে তাঁর ওয়ার্ডে ৫০ কোটি টাকার মতো উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বেশ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান কাজ খুব ধীরে ধীরে করেছে। এতে মানুষের ভোগান্তি হয়েছে। তবে মানুষ সুফল পাবে বলে সহ্য করেছেন। রাস্তা ছাড়াই নালা করার বিষয়ে তিনি বলেন, ওয়ার্ডের অনেক জায়গায় কাজ চলমান আছে। হয়তো ওই জায়গায় রাস্তা হবে। আবার কোথাও কোথাও রাস্তার জায়গা না থাকায় ওই নালাই রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে আকতারুজ্জামান বলেন, অনেকগুলো কাজ এখনো চলমান। এ ছাড়া ওয়ার্ডে আরও বেশ কিছু কাজের বরাদ্দ আছে, সেগুলো হলে ওয়ার্ডের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।