এসএসসির ফল পুনর্মূল্যায়নে ২৫ বছরের আক্ষেপ ঘুচল হান্নানের, হতে চান ‘শিক্ষিত চা বিক্রেতা’

একই সঙ্গে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন বাবা আবদুল হান্নান ও মেয়ে হালিমা খাতুন। গত শনিবার নাটোরের লালপুর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

২৫ বছর আগে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর অর্থকষ্টে আবদুল হান্নানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। পৈতৃক সূত্রে চায়ের দোকানদারি শুরু করেন। সংসারে মনোযোগী হন। কিন্তু অকৃতকার্য হওয়ার গ্লানি থেকে মুক্ত হওয়ার প্রবল ইচ্ছা তাঁকে এবার মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় বসতে বাধ্য করে।

মেয়ে হালিমা খাতুন উত্তীর্ণ হয় সেই পরীক্ষায়। কিন্তু আবারও অকৃতকার্য হন আবদুল হান্নান। তবে ভেঙে পড়েননি তিনি। আত্মবিশ্বাস নিয়ে শিক্ষা বোর্ডে ফলাফল চ্যালেঞ্জ করেন। পুনর্মূল্যায়নে সম্প্রতি তিনি কৃতকার্য হয়েছেন। এমনকি ফলাফলে তিনি মেয়েকেও ছাড়িয়ে গেছেন।

আবদুল হান্নান নাটোরের লালপুর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। সবাই তাঁকে একজন চা বিক্রেতা হিসেবেই চেনে। গত মে মাসে মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিতে বসলে তিনি আলোচনায় আসেন। তাঁর এই উদ্যোগ নিয়ে প্রথম আলোয় ‘মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পাস করে ২৫ বছরের আক্ষেপ ঘোচাতে চান বাবা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত জুলাই মাসে এসএসসির ফলাফল প্রকাশিত হলে মেয়ে হালিমা খাতুন জিপিএ–৩.৭২ পেয়ে কৃতকার্য হয়। কিন্তু হান্নানের ফলাফল অকৃতকার্য আসে। পরিবারের সবার এতে মন খারাপ হয়। আবদুল হান্নান এই ফলাফল মেনে নিতে পারেননি। তিনি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে তাঁর ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেন। বোর্ড কর্তৃপক্ষ ফলাফল পুনর্মূল্যায়নে তাঁকে কৃতকার্য ঘোষণা করে। তাঁর গ্রেড এসেছে জিপিএ–৪.০৭।

আরও পড়ুন

এখন নতুন করে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চান আবদুল হান্নান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আমার বয়স ৪০ বছর। তাতে কিছু আসে–যায় না। আমি কলেজে ভর্তি হব। চা বিক্রির পাশাপাশি নিয়মিত পড়ালেখা করব। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হব। বয়সের কারণে হয়তো পড়ালেখা করে চাকরি পাব না; তবে শিক্ষিত চা বিক্রেতা তো হতে পারব।’

মেয়ে হালিমা খাতুনের কাছে ২৫ বছর পর বাবার আবার অকৃতকার্য হওয়াটা ছিল খুবই কষ্টের। সে পাস করলেও তা নিয়ে একবারের জন্যও বাবার সঙ্গে কথা বলেনি। ফল পুনর্মূল্যায়নে বাবার পাস করার খবর শুনে আনন্দিত হালিমা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। গ্রেডিংয়ে বাবার এগিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে হালিমা বলে, ‘আব্বুর মেধা আছে। তাঁর ইচ্ছাশক্তিও প্রবল। ভেতরে-ভেতরে হয়তো আমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়েছিলেন। শেষ ফলাফল দেখে আমার তা–ই মনে হয়েছে।’